১৯৬৬ বিশ্বকাপ: ঘটনাবহুল আসরে ইংল্যান্ডের বিশ্বজয়
- Details
- by খেলাধুলা ডেস্ক
আগের বিশ্বকাপের ছাপ দেখা গেল ১৯৬৬ ইংল্যান্ড মহাযজ্ঞেও। সেই রক্ষণাত্মক কৌশল এবং গোলখরা। কাকতালীয়ভাবে এই টুর্নামেন্টেও ৩২ ম্যাচে সমান ৮৯টি গোল হয়েছে! অস্বস্তির খবর হচ্ছে চিলির মতো শরীরী ফুটবল হয়েছে ব্রিটিশ সম্রাজ্যে। হয়েছে বিশৃঙ্খলা। প্রশ্ন উঠেছে রেফারিংয়ের মান নিয়েও।
১৯৬৬ বিশ্বকাপ: ঘটনাবহুল আসরে ইংল্যান্ডের বিশ্বজয়
আগের আসরে চিলি-ইতালির ম্যাচটিকে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল ‘ব্যাটল অব সান্তিয়াগো’ নামে। এবারের আসরে যুদ্ধ করেছে আর্জেন্টিনা ও ইংল্যান্ড। ম্যাচে দুই দলই বেপরোয়া হয়ে ওঠে। দফায় দফায় ম্যাচ বন্ধ হয়েছে। মাঠে শৃঙ্খলা আনতে ব্যর্থ হয়েছেন রেফারি। মাঠে নামানো হয় পুলিশ। ম্যাচ শেষে ঘটল আরেক ঘটনা। দুই দল জার্সি বদল করেনি।
ইংল্যান্ড কোচ আলফ র্যাসে তো আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের ‘পশু’ বলে গালি দিয়ে বসেন। তবে বর্ণবিদ্বেষী আচরণের জন্য বক্তব্য প্রত্যাহার করেন তিনি। একই সঙ্গে আর্জেন্টাইনদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন ইংলিশ কোচ। আলোচিত মহারণে আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে হেরে বিদায় নেয় কোয়ার্টার ফাইনাল রাউন্ড থেকে।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই ধাক্কা খায় টুর্নামেন্টের অভিভাবক ফিফা ও আয়োজক ইংল্যান্ড। টুর্নামেন্ট আয়োজনের সব প্রস্তুত যখন শেষ তখনই খোঁজ পড়ে ট্রফির। বিশ্বকাপ তথা জুলে রিমে ট্রফি হারিয়ে গেছে। যেটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও অক্ষত ছিল। সেটাই কিনা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না! বল মাঠে গড়াবে কিনা এ নিয়েই জাগে সংশয়।
উপস্থিতি বুদ্ধিমত্তায় একটা রেপ্লিকা ট্রফি বানায় ফিফা। কিন্তু বিরাট স্বস্তি এলো বিশ্বকাপের আগে। আসল ট্রফির সন্ধান মিলেছে। কোনো মানুষ নন, ফিফা ও ইংল্যান্ডের মান বাঁচিয়েছে একটি কুকুর! ডাস্টবিনে পলিথিনে মোড়ানো বিশ্বকাপের ট্রফি আবিষ্কার করে কুকুরটি। কুকুরটির নাম পিকলস। বিশ্বকাপের নায়ক হয়ে ওঠে কুকুরটি।
টুর্নামেন্টের স্বাগতিক স্বত্ব পেতেও বেশ হ্যাঁপা পোহাতে হয়েছে ইংল্যান্ডকে। আগের আসরে বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে দাবি তুলেছিল ল্যাটিন আমেরিকান দেশগুলো। তাদের দাবি অগ্রাহ্য করা যায়নি। তাদের দেখানো পথেই হেঁটেছে আফ্রিকানরা। বিশ্বকাপের অষ্টম আসর আয়োজনের দাবি জানায় তারা। দাবি পূরণ না হওয়ায় বিশ্বকাপ বয়কট করে আফ্রিকা মহাদেশের দলগুলো।
পরে ভোটাভুটিতে পশ্চিম জার্মানি ও স্পেনকে হারিয়ে স্বাগতিক স্বত্ব নিশ্চিত করে ইংল্যান্ড। টানা দুই আসরে দর্শক সারিতে থাকা আফ্রিকানদের পথে অবশ্য হাঁটেনি এশিয়ানরা। ফিরে আসে বিশ্বকাপে। মূলপর্বে জায়গা করে নেয় উত্তর কোরিয়া। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে তাদের সঙ্গে অভিষেক হয় পর্তুগালের। প্রথম আসরেই চমকে দেয় তারা।
‘কালো চিতা’ খ্যাত ইউসেবিওর দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে যায় পর্তুগাল। তাদের রূপকথার যাত্রায় শেষ হয়ে যায় ব্রাজিলের হ্যাটট্রিক মিশন। বিশ্বকাপ শুরুর আগে ‘ব্রাজিল ঠেকাও’ বলে যে রব উঠেছিল সেটা পর্তুগিজদের মাধ্যমেই হবে সেটা ছিল কল্পনারও বাইরে। হাঙ্গেরিকে নিয়ে পর্তুগাল উঠে যায় নক আউটে। বিদায় নেয় ব্রাজিল। প্রত্যাশার চাপে ভেঙে পড়ে সেলেকাওরা।
এই বিশ্বকাপেও পেলেকে একই ভাগ্য বরণ করতে হলো। চোট পেয়ে প্রথম ম্যাচেই শেষ হয়ে যায় তার বিশ্বকাপ। কিন্তু আগেরবারের মতো এবার আর গারিঞ্চা-ভাবা হয়ে উঠতে পারেননি কেউ। বুলগেরিয়ার বিপক্ষে জিতলেও হাঙ্গেরি ও পর্তুগালের কাছে হেরে যায় ব্রাজিল। পর্তুগিজদের মতো ওই আসরে চমক দেখিয়েছে অভিষিক্ত কোরিয়াও।
তারা ওঠে শেষ আটে। তাদের থামায় ইউসেবিওর ওই পর্তুগালই। কিন্তু কোরিয়ার বিদায়টা হয় মহানাটকীয়। ২৫ মিনিটের মধ্যে পর্তুগালের জালে তিনবার বল জড়ায় কোরিয়া। পরে অলৌকিক এক প্রতাবর্তন করে পর্তুগিজরা। ম্যাচে ইউসেবিও করেন হ্যাটট্রিকসহ চার গোল। ম্যাচটা পর্তুগাল জেতে ৫-৩ গোলে।
নক আউট পর্বে তিন গোল হজম করে সেই ঘাটতি পুষিয়ে পরের রাউন্ডে ওঠার একমাত্র উদাহরণ পর্তুগালই তৈরি করেছিল। শেষ পর্যন্ত স্বাগতিক ইংল্যান্ডে এসে থামে পর্তুগিজদের রূপকথার যাত্রা। ২-১ গোলে জিতে ফাইনালে ওঠে ইংলিশরা। লন্ডনের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটা উপহার দিয়েছে দারুণ এক রোমাঞ্চ। যার শেষটা হয়েছে কলঙ্কের কালি মেখে।
নির্ধারিত সময়ে ২-২ গোলে ড্র করে ইংল্যান্ড ও পশ্চিম জার্মানি। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেই। সেখানেই বাজিমাত স্বাগতিকদের। জিওফ হার্স্টের হ্যাটট্রিকের ওপর দাঁড়িয়ে ইংলিশরা জেতে ৪-২ গোলে। কিন্তু ইংলিশদের তৃতীয় গোলটা এতটাই বিতর্কিত ছিল যে, এখনও সেই আলোচনা লাইম লাইটে চলে আসে। অনেকের মতে ফাইনালের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে বিতর্কিত ওই গোলটাই।
আসরজুড়ে দুর্দান্ত খেলা বেকেনবাওয়ার ফাইনালে খেললেন নিজের ছায়া হয়ে। তার জন্য সান্ত্বনা পুরস্কার ছিল উদীয়মান সেরা হতে পারাটা। তবে আফসোস ঠেকেছে ইউসোবিওর জন্য। ছয় ম্যাচে ৯ গোল করেও দলকে ফাইনালে ওঠাতে পারেননি পর্তুগিজ কিংবদন্তি।
একনজরে ১৯৬৬ বিশ্বকাপ
স্বাগতিক: ইংল্যান্ড
চ্যাম্পিয়ন: ইংল্যান্ড
রানার্সআপ: পশ্চিম জার্মানি
তৃতীয়স্থান: পর্তুগাল
অংশগ্রহণ: ১৬টি
ভেন্যু: ৮টি (৭ শহর)
মোট ম্যাচ: ৩২টি
মোট গোল: ৮৯টি
ম্যাচ প্রতি গোল: ২.৭৮টি
গোল্ডেন বুট: ইউসেবিও (৬ ম্যাচ, ৯ গোল; পর্তুগাল)
উদীয়মান সেরা: ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার (পশ্চিম জার্মানি)
মোট দর্শক: ১৫৬৩১৩৫
ম্যাচ প্রতি দর্শক: ৪৮৮৪৮
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.