১৯৫৮ বিশ্বকাপ: পেলের উত্থান, ব্রাজিলের প্রথম

সব আয়োজন করাই ছিল। উৎসবের প্রস্তুতিও নিয়েছিল ব্রাজিল। এগিয়ে থাকা সেলেকাওরা ড্র করলেই চলতো। কিন্তু দুই গোল হজম করে স্বপ্নভঙ্গ হয় ব্রাজিলের। তাদের ঘাতক উরুগুয়ে। ১৯৫০ বিশ্বকাপের ঐতিহাসিক মারাকানার অলিখিত ফাইনালকে দেশটির ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হিসেবে ভাবা হয়। আরও একবার ব্যর্থ হলো ব্রাজিল। সেই ধাক্কা পরের আসরেও সামলানো গেল না।

১৯৫৮ বিশ্বকাপে উত্থান হয় সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলের

অবশেষে স্বপ্নপূরণ ব্রাজিলের। ষষ্ঠ বিশ্বকাপে এসে প্রথম সাফল্য পেয়েছে সাম্বার দেশটি। এই সাফল্যের মধ্য দিয়ে উত্থান হলো সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলের। তার হাত ধরেই বহু অরাধ্যের ধন ধরা দিয়েছে। স্বাগতিক সুইডেনকে ৫-২ গোলে হারিয়ে ব্রাজিল হাতে তোলে জুলে রিমে ট্রফি। স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় নীল হয়ে যায় সুইডেন।

ইউরোপের মাটিতে ওটা ছিল প্রথম টানা বিশ্বকাপ আয়োজনের উদাহরণ। যার শুরুটাই হলো অঘটন দিয়ে। আগের আসরের রানার্সআপ হাঙ্গেরি বিদায় নিলো গ্রুপপর্বেই! যেটা ছিল বড় অঘটন। অনভিজ্ঞ দল নিয়ে খেলতে আসার মাসুল হাঙ্গেরি দিলো নির্মমভাবে। পুরো দলে বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল কেবল একজনের। তিনি গোলরক্ষক! একই পরিণতি হয়েছে মেসি-ম্যারাডোনা-বাতিস্তুতাদের দেশ আর্জেন্টিনারও। গ্রুপপর্বে তারা হজম করল ১০ গোল। তবে চমক দেখায় ল্যাটিন আমেরিকার আরেক দল প্যারাগুয়ে।

এই প্রতিযোগিতা দিয়ে প্রত্যাবর্তন হয় আর্জেন্টিনারও। ২০ বছর পর আলবিসেলেস্তেরা বিশ্বকাপে ফিরেছে বটে, কিন্তু টুর্নামেন্ট হলো এশিয়ান কিংবা আফ্রিকান কোনো প্রতিনিধিদের ছাড়াই! যথারীতি এই বিশ্বকাপেও অংশ নিয়েছে ১৬টি দল। এই বিশ্বকাপের স্বাগতিক নির্ধারণে অবশ্য অমন জটিলতা হয়নি। প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পায় সুইডেন। স্বাগতিক স্বত্ব পাওয়ার লড়াইয়ে সুইডিসদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি মেক্সিকো, চিলি ও আর্জেন্টিনা।

১৯৫৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের হাতে উঠল স্বপ্নের ট্রফি

ব্রাজিল অবশ্য ওই বিশ্বকাপে খেলেছে ফেভারিটের মতোই। অস্ট্রিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শুরু; সুইডেনকে ৫-২ হারিয়ে শেষ। পুরো আসরে একটি মাত্র ম্যাচে ড্র করেছিল ব্রাজিল। সেটা গ্রুপপর্বের নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে। বিশ্বকাপ দেখল ইতিহাসের প্রথম ড্র। আগের আসরগুলোতে ড্রয়ের পরও খেলা হয়েছে। জয়ী দল নির্ধারণ করার আগ পর্যন্ত খেলা চলতেই থাকতো।

ফুটবল দুনিয়া তখনো পেলে নামক নক্ষত্রকে মাঠে দেখেনি। প্রথম দুই ম্যাচে ১৭ বছর বয়সী ফুটবল বিস্ময়ের জায়গা হলো রিজার্ভ বেঞ্চে। তৃতীয় ম্যাচে অভিষেকের চাপটা সামলাতে পারেননি। কোয়ার্টার ফাইনালেই হলো ইতিহাস। সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার হিসেবে গোল করলেন পেলে। দ্বিতীয়ার্ধে তার ওই গোলের ওপর দাঁড়িয়ে ব্রাজিল ওঠে শেষ চারে।

ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ফ্রান্সকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে ব্রাজিল। হাটট্রিক করেন পেলে। ফাইনালেও জ্বলে উঠলেন তিনি। এবার করলেন আরও দুটি। সেই ঝড়ে এলোমেলো সুইডেন। সুইডেনকে গুণে গুণে পাঁচটি গোল দেয় পেলে-ভাভা-জাগালোরা।

ব্রাজিলের হাতে উঠল স্বপ্নের ট্রফি। ইউরোপ মহাদেশে এসে ল্যাটিন আমেরিকান কোনো দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘটনা সেটিই ছিল প্রথম ও শেষ। এরপর ব্রাজিলের চারটি ও আর্জেন্টিনার দুটি শিরোপা জয়ের একটিও ছিল না ইউরোপে আয়োজিত কোনো টুর্নামেন্টে। সুইডেন বিশ্বকাপে ছয় গোল করে পেলে হলেন উদীয়মান সেরা ফুটবলার। অবিশ্বাস্য ব্যাপারটি হলো- ছয় ম্যাচে ১৩ গোল করে ফ্রান্স স্ট্রাইকার ফন্টেইনের হাতে ওঠে গোল্ডেন বুটের মুকুট। যা এখন পর্যন্ত এক আসরে কোনো ফুটবলারের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড।

একনজরে ১৯৫৮ বিশ্বকাপ

স্বাগতিক: সুইডেন
চ্যাম্পিয়ন: ব্রাজিল
রানার্সআপ: সুইডেন
তৃতীয়স্থান: ফ্রান্স
অংশগ্রহণ: ১৬টি

ভেন্যু: ১২টি (১২ শহর)
মোট ম্যাচ: ৩৫
মোট গোল: ১২৬টি
ম্যাচ প্রতি গোল: ৩.৬০টি

গোল্ডেন বুট: জাস্ট ফন্টেইন (৬ ম্যাচ, ১১ গোল; ফ্রান্স)
উদীয়মান সেরা: পেলে (৪ ম্যাচ, ৬ গোল; ব্রাজিল)
মোট দর্শক: ৮১৯৮১০
ম্যাচ প্রতি দর্শক: ২৩৪২৩