দরজায় কড়া নাড়ছে ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর। কাতার বিশ্বকাপের সঙ্গে সময়ের দূরত্ব আর চারদিনের। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের হিসেব-নিকেশ। টুর্নামেন্ট ঘিরে যেমন রোমাঞ্চ কাজ করছে তেমনি আশঙ্কাও আছে। বিশ্বকাপে কখন যে কী ঘটে যায়! সবশেষ কয়েকটি বিশ্বকাপেও ঘটেছে অদ্ভূত কিছু ঘটনা। ২২তম বিশ্বকাপের আগে দেখে নেওয়া যাক টুর্নামেন্টের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক ১০টি ঘটনা।

all those world cup incidenফুটবল বিশ্বকাপের অদ্ভূত কিছু ঘটনা

১. ঈশ্বরের হাত: ১৯৮৬ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জোড়া গোল করেন ম্যারাডোনা। যার একটি ছিল নিন্দিত অন্যটি নন্দিত। ইংল্যান্ডের ছয় ফুটবলারকে ঘোল খাইয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন ম্যারাডোনা। যেটিকে শতাব্দীর সেরা গোল বলা হয়। আর প্রথম গোলটি ম্যারাডোনা করেন হাত দিয়ে। যা এড়িয়ে যায় রেফারির চোখ। বিতর্কিত সেই গোলটিকে পরে ‘ঈশ্বরের হাত’ বলে আখ্যা দেন ম্যারাডোনা। ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড হারে ২-১ গোলে।

২. জিদানের ঢুঁস: আরও একবার বিশ্বজয়ের নায়ক হওয়ার সুযোগ ছিল জিনেদিন জিদানের। কিন্তু ২০০৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে ইতালি ডিফেন্ডার মার্কো মাতোরাজ্জির বুকে ঢুঁস মেরে বসেন ফরাসি কিংবদন্তি। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে মাতোরাজ্জির উসকানিতে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন জিদান। দেখেন লাল কার্ড। পরে টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় ইতালি। কিন্তু ঠিক কী কারণে জিদান অমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন তা আজও রহস্য হয়ে আছে।

৩. হাসপাতালে রোনালদো: ১৯৯৮ বিশ্বকাপের ফাইনাল। কিন্তু শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের এক ঘণ্টা আগে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পরেন রোনালদো। তাকে বাদ দেওয়া হয় দল থেকে। আর ম্যাচে ফ্রান্সের কাছে ৩-০ গোলে হেরে যায় ব্রাজিল। ফর্মে থাকা রোনালদোর কী হয়েছিল সেই রহস্য আজও উদঘাটন হয়নি। তবে অনেকেরই ধারণা স্বাগতিক ফ্রান্সের ‘চক্রান্ত’ ছিল রোনালদোর অসুস্থ হয়ে পড়াটা।

৪. ল্যাম্পার্ডের ভুতুরে গোল: ফুটবলে গোললাইন যে প্রযুক্ত ব্যবহার হচ্ছে সেটার জন্য ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য। ২০১০ বিশ্বকাপে প্রাপ্য গোল যে পাননি ইংলিশ মিডফিল্ডার! ল্যাম্পার্ডের শট জার্মানদের পোস্টে লেগে ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়ার পর ফিরতি ড্রপে বল চলে আসে বাইরের দিকে। গোলরক্ষক ম্যানুয়েল ন্যুয়ার বলটি ধরে ফেলেন। আর রেফারিও খেলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেন।

ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত ৪-১ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায় ইংল্যান্ড। অনেকের মতে গোলটা বাতিল না হলে ইংল্যান্ড ২-২ ব্যবধানে সমতায় ফিরতে পারতো। ম্যাচের ফলটা হতে পারতো অন্যরকম। প্রবল বিতর্কিত সেই ঘটনার পর ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ থেকে ফিফা চালু করে গোললাইন প্রযুক্তি। আর বাতিল হওয়া সেই গোলটাকে ‘ভুতুরে গোল’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়।

৫. রিভালদোর নাটক: ২০০২ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। ওই আসরে গ্রুপপর্বের ম্যাচে ডাইভ দিয়ে বড় লজ্জায় পড়েছিলেন রিভালদো। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি কর্নার শট নিতে গিয়েছিলেন। এ সময় তুরস্কের উনসাল লাথি দিয়ে বল পাঠান। বল গিয়ে লাগে রিভালদোর হাঁটুতে। কিন্তু মুখে হাত দিয়ে পড়ে যান রিভালদো; রেফারি লাল কার্ড দেন তুর্কি ফুটবলারকে। ম্যাচের বয়স তখন ৮৬ মিনিট। ম্যাচ ছিল ১-১ গোলে ড্র। পরের মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্রাজিলকে জেতান রিভালদো। কিন্তু ডাইভ নাটকের কারণে বিতর্কের মুখে পড়েন তিনি। সমালোচনা করা হয় রেফারির। ওই সময় ভিএআর ছিল না বলে রেফারি বুঝে উঠতে পারেননি ঘটনাটি।

৬. সুয়ারেজের হ্যান্ডবল: ২০২০ বিশ্বকাপের চমক ছিল ঘানা। কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়ের বিপক্ষে নির্ধারিত দেড় ঘণ্টায় ২-২ গোলে ড্র করে তারা। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটে। ম্যাচের শেষ দিকে ডমিনিক আদিইয়াহর শট জড়াচ্ছিল উরুগুয়ের জালে। কিন্তু নিশ্চিত গোলটা হাত ফিরিয়ে দিলেন লুইস সুয়ারেজ। অবধারিতভাবেই লাল কার্ড দেখেন উরুগুয়েন স্ট্রাইকার। পেনাল্টি পায় ঘানা। কিন্তু আসামোয়াহ গায়ান পেনাল্টি মিস করে বসেন। তখন টানেলে দাঁড়িয়ে উদযাপন করতে দেখা যায় সুয়ারেজকে। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকে ৪-২ গোলে হেরে বিদায় নেয় ঘানা। সুয়ারেজ ন্যাক্কারজনক ওই ঘটনাটি না ঘটালে আফ্রিকান প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের টিকিট পেত ঘানা। বহুল আলোচিত সেই ম্যাচে উরুগুয়ের নায়কবনে যান সুয়ারেজ।

৭. রিজকার্ডের থুতু: ১৯৯০ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর ম্যাচে মুখোমুখি হয় পশ্চিম জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস। ম্যাচে জার্মানরা জেতে ২-১ গোলে। কিন্তু ম্যাচের ফল ছাপিয়ে গেছে ডাচ মিডফিল্ডার ফ্র্যাঙ্ক রিজকার্ডের ‘থুতু-কাণ্ড’। ম্যাচের শেষ দিকে জার্মানির রুদি ভলারকে থুতু মারেন রিজকার্ড। তাও একবার নয়, দু দুবার! এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুজনকেই হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। পরে মাঠ থেকে দুজনকেই বহিষ্কার করেন রেফারি।

৮. সুয়ারেজের কামড়: আগের বিশ্বকাপে ঘানার নিশ্চিত গোল হাত দিয়ে ঠেকিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন সুয়ারেজ। পরের বিশ্বকাপে আরেক কাণ্ড ঘটিয়ে বসেন উরুগুয়েন স্ট্রাইকার। বারবার গোলের সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন তিনি। গ্রুপপর্বের সেই ম্যাচের একটা পর্যায়ে ইতালিয়ান ডিফেন্ডার জর্জিও কিয়েলিনির কাঁধে কামড় মেরে বসেন সুয়ারেজ। লাল কার্ড তো বটেই, পুরো টুর্নামেন্ট থেকে নিষিদ্ধ করা হয় তাকে।

পরে তাকে ক্লাব ফুটবল থেকে ৯ মাস এবং সবধরনের ফুটবল থেকে চার মাস নিষিদ্ধ করে ফিফা। বহুল আলোচিত সেই ম্যাচে অবশ্য উরুগুয়ে ১-০ গোলে জিতেছিল। জাতীয় দলের হয়ে এমন ঘটনা প্রথম হলেও ক্লাব ফুটবলে আরও দুই প্রতিপক্ষকে দংশন করেছিলেন সুয়ারেজ। তবে ২০১০ ও ২০১৪ সালে ন্যাক্কারজনক কাজ করলেও ২০১৮ সালে নতুন কোনো অপরাধ করেননি তিনি।

৯. নিষিদ্ধ ম্যারাডোনা: ১৯৯৪ বিশ্বকাপ চলাকালীন ডোপ টেস্টে পজিটিভ হন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। গ্রিস ম্যাচের পর আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিকে বিশ্বকাপ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। অনেকের মতে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে না পড়েলে ম্যারাডোনা নিজেকে আরও উচ্চায় নিয়ে যেতে পারতেন।

১০. রয় কিনের প্রস্থান: ২০১০ বিশ্বকাপ না খেলেই দেশে ফিরে গেছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক রয় কিন। তার ক্ষোভের কারণ ছিল অনুশীলনে প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হওয়ার। জাপানে আইরিশদের অনুশীলনের জায়গাটিকে ‘গাড়ি পার্কিং’য়ের মতো পিচ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। ঘটনাটা বিশ্বকাপের ইতিহাসে বাজে একটি উদাহরণ হিসেবে দেখা হয়।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.