১৯৫৪ বিশ্বকাপ: ‘জার্মান যন্ত্রে’ বিকল পুসকাসের স্বপ্ন

১৯৫০ বিশ্বকাপেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আলামত ভালোভাবেই পাওয়া গেছে। রেশ থাকল ১৯৫৪ বিশ্বকাপেও। ক্রীড়াঙ্গনের জন্য ওই বছরটি ছিল স্মরণীয়। এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (এএফসি) এবং ইউনিয়ন অব ইউরোপিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (উয়েফা) প্রতিষ্ঠা করা হয়। উন্নতি শুরু হয় এশিয়া ও ইউরোপিয়ান ফুটবলে। যার প্রভাব পড়ে পঞ্চম বিশ্বকাপে। যা ছাড়িয়ে যায় আগের সবকটি আসরকে। টুর্নামেন্টটিকে বলা হয় গোলের বিশ্বকাপ।

১৯৫৪ বিশ্বকাপ: ‘জার্মান যন্ত্রে’ বিকল পুসকাসের স্বপ্ন

২৬টি ম্যাচে হয় ১৪০ গোল। আর কোনো টুর্নামেন্টে এত গোল হয়নি। এমনকি ৩২ দল অংশ নেওয়ার পরও। কিন্তু বিশ্বকাপের সেরা দল যে চ্যাম্পিয়ন হতে পারে না, সেটার যাত্রা শুরু হয় এবারই। অপ্রতিরোধ্য হাঙ্গেরি খেই হারিয়ে ফেলে ফাইনালে। ফেরেঙ্ক পুসকাস ও স্যান্ডর ককসিসের ‘ম্যাজিক্যাল ম্যাগিয়ার্স’ শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে হেরে যায় জার্মানির কাছে। সেবার হাঙ্গেরির শিরোপা না জেতা ক্রীড়া ইতিহাসের সর্বকালের সেরা অঘটনগুলোর একটি।

টুর্নামেন্টের ফরমেটটা ছিল বিস্ময়কর। চার গ্রুপে ভাগ করা হয় ১৬ দলকে। এদের মধ্যে আটটি বাছাই এবং অন্য আটটি অবাছাই। প্রতি গ্রুপের বাছাই দুই দল খেলে অবাছাই দুটি দলের সঙ্গে। নির্ধারিত দেড় ঘণ্টায় ম্যাচে সমতা থাকলে খেলা হবে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট। চার রাউন্ডের পর গ্রুপের সেরা দুই দল উঠবে পরের ধাপে।

সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ম্যাচ ছিল প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে। যার প্রথমার্ধের ফল ছিল ৫-৪! শেষ পর্যন্ত অস্ট্রিয়া ৭-৫ গোলে হারায় সুইজারল্যান্ডকে। যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড! ম্যাচটিকে যদি সৌন্দর্য্যের বলা হয় তাহলে কুৎসিত বলতে হবে হাঙ্গেরি-ব্রাজিল মহারণকে। সেই ম্যাচে দুই দল সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।

ব্রিটিশ রেফারি আর্থার এলিস চারটি হলুদ কার্ড আর তিনটি লাল কার্ড দেখান। ম্যাচে ফ্রি-কিক দেন ৪২টি এবং পেনাল্টি দুটি। ম্যাচ শেষে হাঙ্গেরির ড্রেসিংরুমেও চলে মারপিট। হাঙ্গেরির কোচের মুখে তো চারটা সেঁলাইও লেগেছিল! বার্নের ভাঙ্কডর্ফ স্টেডিয়ামে এই ম্যাচটিকে আখ্যা দেওয়া হয় ‘ব্যাটল অব বার্ন’ নামে। ম্যাচে ব্রাজিল হারে ৪-২ গোলে।

এই বিশ্বকাপ দিয়েই শুরু হয় জার্মানির নিখুঁত ‘যান্ত্রিক ফুটবল’। ক্লান্তির রেশমাত্র ছিল না জার্মানদের মধ্যে। পুরো টুর্নামেন্টে উদ্যমি ফুটবল খেলেছে তারা। হাঙ্গেরির শৈল্পিক ফুটবলের মৃত্যু ঘটায় জার্মানরা। অপ্রতিরোধ্য হয়ে পুসকাস-ককসিস জুটি রুখে দেয় যুদ্ধবিধ্বস্ত জার্মানি। ফাইনালের আট মিনিটে দুই গোলে এগিয়ে থেকেও হেরে যায় হাঙ্গেরি।

১৮ মিনিটের মধ্যে দুই গোলের শোধ দেয় জার্মানরা। পরের এক ঘণ্টা ছয় মিনিট কাটল গোলখরায়। ৮৪ মিনিটে রাহন ডাবলস পূরণ করে জার্মানদের এগিয়ে দেন। শিরোপা জেতে তারা। কিন্তু ম্যাচের ফলটা অন্যরকম হতে পারত। লিড নিতে পারত হাঙ্গেরি। সেটা হয়নি ম্যাচের শেষ দিকে পুসকাসের গোল বাতিল হওয়ায়।

হাঙ্গেরির বিশ্বকাপ জিততে না পারার কারণ রেফারির ওই অফসাইড সিদ্ধান্তটা। হারের আরও দুটি কারণ আছে। প্রথমত, ফাইনালে কোনো গোলই করতে পারেননি ককসিস। দ্বিতীয়ত, ম্যাচটা পুসকাস খেলেছেন চোট নিয়ে।

একনজরে ১৯৫৪ বিশ্বকাপ

স্বাগতিক: সুইজারল্যান্ড
চ্যাম্পিয়ন: পশ্চিম জার্মানি
রানার্সআপ: হাঙ্গেরি
তৃতীয়স্থান: অস্ট্রিয়া
অংশগ্রহণ: ১৬টি

ভেন্যু: ৬টি (৬ শহর)
মোট ম্যাচ: ২৬টি
মোট গোল: ১৪০টি
ম্যাচ প্রতি গোল: ৫.৩৮টি
গোল্ডেন বুট: স্যান্ডর ককসিস ১১ গোল (হাঙ্গেরি)

মোট দর্শক: ৭৬৮৬০৭
ম্যাচ প্রতি দর্শক: ২৯৫৬২