প্রথম আসরেই বিশ্বকাপ আয়োজন করে শিরোপা জেতে উরুগুয়ে। পরের দুই আসর থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয় ল্যাটিন আমেরিকার দলটি। উরুগুয়ে বিশ্বমঞ্চে ফিরেছে ১৯৫০ সালে। তাদের ফেরাটা হয়েছে স্বপ্নের। ফিরেই শিরোপা জিতেছে তারা। তাও আবার ব্রাজিলে এসে। স্বাগতিকদের হারিয়ে সুয়ারেজ-ফোরলানদের দেশ জেতে ট্রফি।

fifa world cup 1950১৯৫০ বিশ্বকাপ: উরুগুয়ের স্বপ্নপূরণ, ব্রাজিলের মারাকানা ট্রাজেডি

উরুগুয়ে যখন স্বপ্নপূরণের আনন্দে ভাসছিল তখন মুদ্রার অন্য পিঠে ভয়ানক এক দুঃস্বপ্ন। যার নাম ‘মারাকানা ট্রাজেডি’। ঘরের মাঠে প্রথম শিরোপা জিততে জিততে হেরে যায় ব্রাজিল। অথচ বিশ্বকাপ জয়ের উৎসবের সম্ভাব্য সব আয়োজনই করেছিল সেলেকাওরা। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ড্র করলেই চলত স্বাগতিকদের।

ইতিহাসের একমাত্র বিশ্বকাপ হিসেবে এই আসরেই ছিল না কোনো ফাইনাল। তবে ব্রাজিল-উরুগুয়ে ফাইনালটা রূপ নিয়েছিল অলিখিত ফাইনালে। যেখানে ৬৫ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে ছিল সেলেকাওরা। ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে এরপরের গল্পটা প্রায়সবারই জানা। ১৩ মিনিটের মধ্যে দুই গোল হজম করে ব্রাজিল।

শোকে, হতাশায় বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত ব্রাজিল। মারাকানা স্টেডিয়ামে হয়ে ওঠে মৃত্যুপুরী। ২-১ গোলের হারে রচিত হয় ব্রাজিলের ‘মারাকানা ট্রাজেডি।’ ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসে ওই হারটাই ছিল চিরকালীন এক আক্ষেপের নাম। পুরো আসরে দাপট দেখানো ব্রাজিল চূড়ান্ত ম্যাচে খেই হারিয়ে ফেলে। ব্রাজিলের জন্য সান্ত্বনা ছিল প্রথমবার রানার্সআপ হওয়াটা।

স্বাগতিক স্ট্রাইকার অ্যাডেমির নয় গোল করে জেতেন গোল্ডেন বুট। কিন্তু দলীয় ব্যর্থতায় তা অনেকটাই আড়াল হয়ে গেছে। ফাইনাল ম্যাচের সেই ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক বারবোসাকে দুই গোল হজমের চড়া মাসুল দিতে হয়। আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। ২০০০ সালে ‘অভিশপ্ত’ গোলরক্ষকের মৃত্যুর পর ব্রাজিলের একটি সংবাদমাধ্যম শিরোনাম করেছিল, ‘বারবোসার দ্বিতীয় ম্যৃত্যু।’ তাহলে প্রথম মৃত্যুটা কখন? ওই যে পঞ্চাশের ফাইনালে!

প্রথম আসরের মতো চতুর্থটাও আয়োজন করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। ১৯৩৮ বিশ্বকাপের পর অন্ধকার নেমে আসে পৃথিবীতে। মানবসৃষ্ট সবচেয়ে বড় ‘দুর্যোগ’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আঘাতে ফুটবলের শ্রেষ্ঠ আয়োজন ছিটকে যায় মাঠের বাইরে। বিশ্বকাপের চতুর্থ আয়োজনের জন্য ফিফাকে অপেক্ষা করতে হয় এক যুগ পর্যন্ত। ১৯৫০ সালেও কাটেনি বিশ্বযুদ্ধের রেশ।

টুর্নামেন্ট আয়োজন নিয়েও মঞ্চস্থ হয় নানা নাটক। স্বাগতিক দেশ হওয়ায় ব্রাজিল এবং ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে খেলতে হয়নি বাছাইপর্ব। মূলপর্বের বাকি ১৪টি দল নির্ধারণ করতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয় ফিফাকে। কারণ নিজেদের মহাদেশে আয়োজিত বিশ্বকাপে সরাসরি অংশ নিতে চায় ইকুয়েডর, আর্জেন্টিনা ও পেরু। আগের দুই আসরের রানার্সআপ হাঙ্গেরি এবং চেকোস্লোভাকিয়াও বাছাইপর্ব না খেলার জোরালো দাবি তোলে।

তাদের সেই আন্দোলনে আবার যোগ দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার ও ফিলিপাইন। শেষ অবধি বিশ্বকাপই বর্জন করে বসে এই দশটি দল। এশিয়ার একমাত্র দল হিসেবে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগটা পায় ভারত। কিন্তু অদ্ভুত এক দাবি তোলে দেশটি। বুট নয়, খালি পায়ে বিশ্বমঞ্চে খেলার আবদার জানায় তারা! তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে ফিফা। ভারতেরও আর বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া হয়নি।

অনেক নাটকের পর এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের কোনো প্রতিনিধির অংশগ্রহণ ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয় ব্রাজিল বিশ্বকাপ। ১৬ দল নির্বাচন হলেও ভারতের মতো নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে স্কটল্যান্ড ও তুরস্ক। বিশ্বকাপ হয় ১৩ দলের। যেখানে নক আউট পর্ব নিয়ে হয় জটিলতা। পুরো টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয় রবিন লিগ রাউন্ড পদ্ধতিতে! গ্রুপ পর্বের চার চ্যাম্পিয়ন দল ওঠে শেষ চারে।

একনজরে ১৯৫০ বিশ্বকাপ

স্বাগতিক: ব্রাজিল
চ্যাম্পিয়ন: উরুগুয়ে
রানার্সআপ: ব্রাজিল
তৃতীয়স্থান: সুইডেন
অংশগ্রহণ: ১৩টি (নাম প্রত্যাহার করে স্কটল্যান্ড, ভারত ও তুরস্ক)

ভেন্যু: ৬টি (৬ শহর)
মোট ম্যাচ: ২২টি
মোট গোল: ৮৮টি
ম্যাচ প্রতি গোল: ৪টি
গোল্ডেন বুট: অ্যাডেমির- ৯ গোল (ব্রাজিল)

মোট দর্শক: ১০৪৫২৪৬
ম্যাচ প্রতি দর্শক: ৪৭৫১১

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.