এক বৃত্তে সাত বিশ্বকাপ মেক্সিকোর

ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে অভিজ্ঞ দলগুলোর একটি মেক্সিকো। প্রথম বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে তারা। কিন্তু অন্তত ১৬টি বিশ্বকাপ খেলা দলগুলোর মধ্যে তারাই কোনো শিরোপা জিততে পারেনি। বাকি চারটি দল ঠিকই অন্তত একবার হলেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। শিরোপা জয় তো দূরের কথা, কখনো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেই ওঠা হয়নি তাদের।

টানা সাত বিশ্বকাপ ধরে শেষ ষোলোর বৃত্তে আটকে আছে মেক্সিকো। এবার বৃত্ত ভাঙতে চাইবে তারা

দুবার কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে উত্তর আমেরিকার দেশটি। সবশেষ ১৯৮৬ সালে শেষ আটে উঠেছিল তারা। পরের আসরে নিষেধাজ্ঞার কারণে অংশ নিতে পারেনি মেক্সিকো। এরপরের গল্পটা কেবল একটা ধাপেই আটকে আছে। টানা সাতবার শেষ ষোলোতেই বিদায় নিয়েছে তারা। গত মৌসুমে জার্মানিকে বিদায় করলেও বেশিদূর এগোতে পারেনি মেক্সিকো।

কাতার বিশ্বকাপ তাদের জন্য শেষ ষোলোর বৃত্ত ভাঙার উপলক্ষ্য। নামের প্রতি সুবিচার করতে পারলে এবারো নক আউট পর্বে উঠবে মেক্সিকো। কারণ গ্রুপে তাদের চেয়ে শক্তিধার কেবল আর্জেন্টিনা। পোল্যান্ড ও সৌদি আরবকে হারানোর সামর্থ্য রাখে মেক্সিকো। গত আসরেও অবশ্য কঠিন গ্রুপে পড়েছিল তারা। তবে সুইডেনকে নিয়ে উতরে যায় মেক্সিকানরা।

মেক্সিকো তাদের প্রথম ছয়টি বিশ্বকাপেই বাদ পড়েছে গ্রুপপর্ব থেকে। ১৯৭০ সালে নিজেদের উঠোনে বিশ্বমঞ্চে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠলেও ইতালির কাছে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে শেষ আটে থেমে যায় স্বাগতিকদের স্বপ্নযাত্রা। তিন আসর পর মেক্সিকানরা বীরদর্পে শুরু করলেও সেমিফাইনালের আগেই বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের। এবার অনেক দূরে চোখ মেক্সিকোর।

তারকা: আন্দ্রেস গুয়ার্দাদো এই মুহূর্তে মেক্সিকো দলের সবচেয়ে বড় তারকা। যৌথভাবে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড তার দখলে। আর এক ম্যাচ খেললে গুয়ার্দাদো ছাড়িয়ে যাবেন ক্লদিও সুয়ারেজকে। দুজনেরই ম্যাচ সংখ্যা ১৭৭। ২০০৫ সালে মেক্সিকোর হয়ে অভিষেক হয় গুয়ার্দাদোর। কাতারে ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপটি খেলতে যাচ্ছেন ৩৬ বছর বয়সী এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। দলে আরেক তারকার নাম গুলের্মো ওচোয়া। প্রায়ই গোলপোস্টে নিতে অতিমানব হয়ে উঠেন তিনি। এবারের আসরে এই দুজনই মেক্সিকোর ভরসার প্রতীক।

প্রধান কোচ: ২০১৯ সালে মেক্সিকোর প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ হয় জেরার্ডো টাটা মার্টিনোর। এর আগে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা ও ল্যাটিন জায়ান্ট আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু বেশি সময় টিকতে পারেননি মার্টিনো। পরে তৃতীয় জাতীয় দল হিসেবে মেক্সিকোর হয়ে পথচলা শুরু করেন ৫৯ বছর বয়সী এই কোচ। তার অধীনে বিশ্বকাপের টিকিট কেটেছে মেক্সিকো। এবার বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করতে চান তিনি।

কিংবদন্তি: মেক্সিকোর ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কিংবদন্তি রাফায়েল মার্কেজ। চতুর্থ ফুটবলার হিসেবে সর্বোচ্চ পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপে তিনি ছুঁয়েছেন স্বদেশি কিংবদন্তি অ্যান্তনিও কারবাহাল, ইতালির জিয়ানলুইজি বুফন ও জার্মানির লোথার ম্যাথিউসকে। দেশের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ম্য্যাচ খেলার রেকর্ডটা মার্কেজের দখলে। ১৪৭ ম্যাচে ১৭টি গোল করেছেন তিনি। ১৯৯৭ সালে অভিষিক্ত এই তারকা অবসর নেন গত বিশ্বকাপের পরপরই। তবে এই শতাব্দীতে মেক্সিকান ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন হয়ে উঠেছিলেন হ্যাভিয়ের হার্রান্দেজ চিচারিতো। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়নি মেক্সিকোর হয়ে ১০৯ ম্যাচে ৫২ গোল করা এই তারকার।

মেক্সিকো

গ্রুপ ‘সি’: আর্জেন্টিনা, পোল্যান্ড, মেক্সিকো, সৌদি আরব

ফিফা র‌্যাঙ্কিং: ১৩

বিশ্বকাপ রেকর্ড

১৩৯০: গ্রুপপর্ব
১৯৩৪: অংশ নেয়নি
১৯৩৮: নাম প্রত্যাহার
১৯৫০-৬৬: গ্রুপপর্ব
১৯৭০: কোয়ার্টার ফাইনাল

১৯৭৪: বাছাইপর্ব
১৯৭৮: গ্রুপপর্ব
১৯৮২: বাছাইপর্ব
১৯৮৬: কোয়ার্টার ফাইনাল

১৯৯০: নিষিদ্ধ
১৯৯৪-২০১৮: শেষ ষোলো

গ্রুপপর্বের সূচি

২২ নভেম্বর: মেক্সিকো-পোল্যান্ড, রাত ১০টা
২৬ নভেম্বর: আর্জেন্টিনা-মেক্সিকো, রাত ১টা
৩০ নভেম্বর: মেক্সিকো-সৌদি আরব