১৯৩৮ বিশ্বকাপ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে আরেক যুদ্ধ
- Details
- by খেলাধুলা ডেস্ক
প্রথম বিশ্বকাপের পর অনেক দিন শান্ত ছিল পৃথিবী। কিন্তু ভেতরে ছিল ছাইচাপা আগুন। যেটার আঁচ বেরোতে থাকে ১৯৩০ সাল থেকে। ১৯৩৪ দ্বিতীয় বিশ্বকাপেও বের হতে থাকে বারুদ পোড়া গন্ধ। এরপর ধীরে ধীরে পৃথিবী ঢলে পড়ে বিশ্বযুদ্ধের দিকে। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলেও, এর মহড়া শুরু হয়ে যায় ১৯৩৮ সাল থেকেই।
১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ইতালি
বিশ্ব রাজনীতি উত্তাল হয়ে পড়ে তখন। হিংসার আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল ইউরোপজুড়ে। সেটার আঁচ লাগতে শুরু করে অন্য মহাদেশগুলোতেও। গোলা-বারুদ সঞ্চারণ আর শক্তির মহড়ায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল ইউরোপের পরাশক্তি কয়েকটি দেশ। পরিস্থিতি এমন যে, যে কোনো সময় বেঁধে যাবে যুদ্ধের দামামা। এমন আবহেই তৃতীয় বিশ্বকাপ আয়োজনে মরিয়া হয়ে ওঠে ফিফা।
এই বিশ্বকাপে খেলার মাঠের খেলার চেয়ে রাজনীতির মাঠের খেলাই বেশির ভাগ সময় আলোচনায় ছিল। উত্তপ্ত আবহেই বিশ্বকাপের আসর বসে ফ্রান্সে। টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নেয় ১৬ দল। যথারীতি টানা দ্বিতীয় হলো বাছাইপর্বে। এবারো ইউরোপ থেকে অংশ নেয় ১২টি দল। তবে প্রথম স্বাগতিক দল হিসেবে সরাসরি বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায় ফ্রান্স।
স্বাগতিক দেশের বাছাইপর্ব না খেলার প্রচলন চালু হয় সেখান থেকেই। এ নিয়ে যেমন আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে ছিল তেমনটি মূলপর্বের টিকিট পেয়েও অংশ নিতে না পারায় লাইমলাইটে ছিল অস্ট্রিয়া। যে দেশটির দখল বিশ্বকাপের আগেই নিয়ে ফেলেছে জার্মানি। অস্ট্রিয়ানদের বিশ্বকাপ ভাগ্য তাই নির্ভর করছিল জার্মানদের হাতে।
আগের আসরে যেমন বেনিতো মুসোলিনির ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরশাসন দেখা গিয়েছিল তেমনি আরেকজন হাজির হলেন ১৯৩৮ বিশ্বকাপে। তিনি অ্যাডলফ হিটলার, যিনি একনায়কতন্ত্রের ধারক ও বাহক। যাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ‘মাস্টার মাইন্ড’ বলা হতো তাকে। সেই হিটলারের স্বৈর শাসনের মধ্য দিয়েই চলেছে বিশ্বকাপের তৃতীয় আসর।
অস্ট্রিয়া নয়, জার্মানির জার্সি পরে বিশ্বকাপে খেলতে হবে। অস্ট্রিয়ান খেলোয়াড়দের এমনই শর্ত দেন হিটলার। কিন্তু অস্ট্রিয়ানরা রাজি হননি। দেশপ্রেম দেখিয়ে বিশ্বকাপ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে অস্ট্রিয়া। তবে দেশটির কিছু খেলোয়াড় জার্মানির হয়ে অংশ নিতে বাধ্য হন। বিশ্বকাপে অস্ট্রিয়া না থাকায় টুর্নামেন্ট হয় ১৫ দলের। সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনালে চলে যায় সুইডেন।
এই আসরেও অংশ নিতে পারেনি বিশ্বজয়ী প্রথম দল উরুগুয়ে। এবার তাদের সঙ্গে বিশ্বকাপে না খেলতে যোগ দেয় ল্যাটিন আরেক পরাশক্তি তথা ম্যারাডোনা-মেসি-বাতিস্তুতাদের দেশ আর্জেন্টিনা। ওই বিশ্বকাপে খেলেনি ইউরোপের জায়ান্ট দল স্পেনও। কারণ ততক্ষণে দেশটিতে শুরু হয়ে গেছে গৃহযুদ্ধ। যার চড়া মূল্য দিতে হয়েছে স্প্যানিয়ার্ডদের।
আগের দুটি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় স্বাগতিক দেশ। যার ছেদ পড়ে ফ্রান্স বিশ্বকাপে। ঘরের মাঠে আয়োজিত টুর্নামেন্টে স্বাগতিকদের পথচলা থেমে যায় ইতালির হাত ধরে। মূলত ফ্রান্স প্রতিযোগিতার আয়োজক হলেও মূল প্রভাব ছিল জার্মানদের হাতে। আরেকটু ছোট করে বললে হিটালের হাতে। ফাইনালে ফেরেঙ্ক পুসকাসের হাঙ্গেরিকে ৪-২ গোলে হারায় ইতালি। একমাত্র দল হিসেবে তারাই দীর্ঘ সময় শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে। সময়টা প্রায় ১৬ বছর! কারণ পরের বিশ্বকাপটা যে হয়েছে ১৯৫০ সালে!
এই আসর দিয়ে বিশ্বকাপে অভিষেক হয় এশিয়ান কোনো দলের। দলটার নাম ডাচ ইস্ট-উইন্ডিজ। বর্তমানে যা ইন্দোনোশিয়া নামে চিনে থাকে বিশ্ব। তাদের সঙ্গে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে আসে কিউবা। প্রথমবার খেলতে এসেই চমক দেখায় তারা কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে কিউবা। তবে একমাত্র দল হিসেবে টানা তিনটি বিশ্বকাপে অংশ নিলেও ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় ব্রাজিল।
সেলেকাওরা অবশ্য শিরোপার দাবিদার ছিল। কিন্তু ওই বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় লাওনিডাসকে সেমিফাইনালের একাদশেই রাখেননি তখনকার ব্রাজিল কোচ। পরে ইতালির কাছে ২-১ গোলে হেরে বিদায় নেয় ব্রাজিল। অনেকের মতে, লাওনিডাস মাঠে থাকলে ম্যাচের ফলটা অন্যরকম হতে পারতো। সাত গোল করা সেই লাওনিডাসের ওঠে গোল্ডেন বুটের মুকুট।
এই বিশ্বকাপের ফরমেট ছিল আগেরটির মতোই। রেফারিংয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন ছিল। আলোচিত জার্মানি অবশ্য বাদ পড়েছে প্রথম রাউন্ডেই। শেষ ষোলোর ওই ম্যাচে নির্ধারিত সময়ে তারা ১-১ গোলে ড্র করে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে। পরে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হেরে যায় জার্মানরা। আসলে মাঠের খেলার চেয়ে বাইরের খেলায় জার্মানির মনোযোগ ছিল।
একনজরে ১৯৩৮ বিশ্বকাপ
স্বাগতিক: ফ্রান্স
চ্যাম্পিয়ন: ইতালি
রানার্সআপ: হাঙ্গেরি
তৃতীয়স্থান: ব্রাজিল
অংশগ্রহণ: ১৫টি (নাম প্রত্যাহার করে অস্ট্রিয়া)
ভেন্যু: ১০টি (৯ শহর)
মোট ম্যাচ: ১৮টি
মোট গোল: ৮৪টি
ম্যাচ প্রতি গোল: ৪.৬৭টি
গোল্ডেন বুট: লিওনিডাস- ৭ গোল (ব্রাজিল)
মোট দর্শক: ৩৭৪৮৩৫
ম্যাচ প্রতি দর্শক: ২০৮২৪
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.