উরুগুয়ে: কাভানি-সুয়ারেজের জন্য একটা লড়াই

পুরোনো দুঃস্মৃতি ভুলে এবার কাতারে দারুণ কিছু করার আশা উরুগুয়ের। দুবার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে দুবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেমিফাইনালে খেলেছে তিনবার। ২০১০ বিশ্বকাপে শেষ চারে উঠেছে।

সুয়ারেজের এমন উদযাপন দেখার অপেক্ষায়

গত আসরে শেষ করেছে পাঁচে থেকে। আয়োজক হিসেবে প্রথম বিশ্বকাপেই (১৯৩০) চ্যাম্পিয়ন তারা। ১৯৫০ বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে লিখেছে মারাকানা ট্র্যাজেডি। তবু বিশ্ব ফুটবলে উরুগুয়ে ঠিক সমীহ আদায় করতে পারে না। কেন জানি চ্যাম্পিয়নের সম্মান পুরোটা পায় না। তারপরও ওরা চ্যাম্পিয়ন। আর চ্যাম্পিয়নরা কখনও ছোট স্বপ্ন দেখে না।

উরুগুয়ে ১৩ আসরে অংশ নিয়ে তিনবার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে। তিনবার ঘরে ফিরতে হয়েছে শেষ ষোলো থেকে। কাতার বিশ্বকাপে ‘এইচ’ গ্রুপে একেবারে সহজ প্রতিপক্ষ পায়নি তারা। কাতারে ফেভারিট হিসেবেও পা রাখছে না। তবু উরুগুয়ে কোয়ার্টার বা সেমিফাইনালে খেলার মাঝারি স্বপ্নের কথা বলবে না। কারণ ওরা চ্যাম্পিয়ন। দলটির গোলরক্ষক সার্জিও রোচেট ফিফাকে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, উরুগুয়ে অবশ্যই ভালো দল, যারা ক্ষুধার্ত।

তারকা: এখনো দলের মূল তারকা সুয়ারেজ। সঙ্গে কাভানিকেও রাখা যায়। রাশিয়া বিশ্বকাপে কাভানির ডাবলে শেষ ষোলোয় বিদায় নিতে হয়েছিল ইউরো চ্যাম্পিয়নের তকমা নিয়ে বিশ্বকাপে আসা পর্তুগিজদের। এবার প্রতিশোধের পালা দক্ষিণ কোরিয়া, ঘানার জন্যও। জোড়া গোলে ২০১০ বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়াকে শেষ ষোলোয় বিদায় করেছিলেন লুইস সুয়ারেজ। কোয়ার্টার ফাইনালে ১২০ মিনিটে ঘানার নিশ্চিত গোল হাত দিয়ে ফিরিয়েছিলেন সুয়ারেজ, যার শোধ আফ্রিকার দেশটি নিতে চাইবেই। তবে পুরোনো হিসাব নিকাশের মাঝে এবার সুয়ারেজ কাভানির দিকে তাকিয়ে থাকবে উরুগুয়ে। দুজন এখনও গোল পাচ্ছেন। ফর্মে আছেন লিভারপুলে খেলা ডারউইন নুনিয়েজ। আছেন রিয়ালে খেলা ভালভার্দে, টটেনহামে খেলা বেনটাকুর ও ল্যাজিওতে খেলা ম্যাতিয়াস ভেকিনোর মতো মিডফিল্ডার। রক্ষণে যাদের বার্সায় খেলা আরাজু, ন্যাপোলিতে খেলা অলিভেইরা, গেটাফেতে খেলা দামিয়ান সুয়ারেজ আছেন, তাদের কোনো দলকেই ভয় পাওয়ার কথা নয়।

কিংবদন্তি: উরুগুয়ের একাধিক কিংবদন্তি খেলোয়াড় আছেন। যার মধ্যে দিয়েগো ফোরলান বেশ পরিচিত মুখ। দেশটির ফুটবলে তার অবদান ছিল দারুণ। এছাড়া হেক্টর কাস্ত্রো, ফুটবলের এই মহা-তারকার গল্প অনুপ্রেরণার, এই গল্প হার না মেনে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার। একদিন বৈদ্যুতিক করাত ব্যবহার করে কাঠ কাটতে গিয়ে দুর্ঘটনায় ডান কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার হাত, তখন তার বয়স মাত্র ১৩ বছর! এক হাত হারিয়ে ১৩ বছরের বালকের জীবন যুদ্ধ আরও কঠিন হয়ে পড়ে, কিন্তু হাল ছাড়েননি কাস্ত্রো।

কোচ: ক্লাব কোচিংয়ে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে উরুগুয়ের ডাগআউটে আাছেন ডিয়েগো আলোনসো। গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় দলের কোচ হয়েছেন তিনি। দলকে বিশ্বকাপে তুললেও সাবেক কোচ অস্কার তাবরেজের উত্তরসূরি হওয়া বাকি তাঁর। তাবরেজ ১৫ বছর উরুগুয়ের কোচ ছিলেন। লাঠি ভর দিয়ে, কখনও হুইলচেয়ারে বসে দলের দায়িত্ব সামলেছেন। তিনিই দলের বাজে পারফরম্যান্সের জন্য ছাঁটাই হয়েছেন।

আলোনসো ছিলেন স্ট্রাইকার। দেশের জার্সিতে মাত্র সাত ম্যাচ খেলেছেন। ২০০২ বিশ্বকাপে তাঁকে দলে না নেওয়ায় তৎকালীন উরুগুয়ে কোচ সমালোচিত হয়েছিলেন। অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদে ধারে খেলা আলোনসো (৩৮ লিগ ম্যাচে ২২ গোল) তখন আগুন ফর্মে ছিলেন। ক্লাব ক্যারিয়ারে তিনি ছিলেন পুরোপুরি যাযাবর। ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে ১২ ক্লাবে খেলেছেন তিনি। কোচিং ক্যারিয়ারেও তাই।

প্যারাগুয়ের ক্লাবে ২০১১ সালে কোচিং শুরু করেন আলোনসো। ২০১৪ সালে মেক্সিকান ক্লাব পাচুকায় চাকরি নেন। ২০১৬ মৌসুমে লিগ ও কনকাকাফ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতেন। ২০১৮ মৌসুমে মেক্সিকোর ক্লাব মন্টেরেরিতে গিয়ে কনকাকাফ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতেন।  এক মৌসুম ইন্টার মায়ামিতেও কাজ করেছেন। এক বছর পরই তাঁকে উরুগুয়ের দায়িত্ব ছাড়তে হবে কি না, কাতার বিশ্বকাপই তা বলে দেবে।

একনজরে

র‍্যাঙ্কিং: ১৪

প্রথম বিশ্বকাপ: ১৯৩০
মোট বিশ্বকাপ: ১৪ বার
চ্যাম্পিয়ন: ১৯৩০ ও ১৯৫০
বেশি ম্যাচ: দিয়েগো গোডিন (১৫৯)
বেশি গোল: লুইস সুয়ারেজ (৬৮)

গ্রুপ পর্বে প্রতিপক্ষ

দক্ষিণ কোরিয়া, পর্তুগাল ও ঘানা

ফিকশ্চার

২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টা প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া
২৮ নভেম্বর রাত ১টা প্রতিপক্ষ পর্তুগাল
২ ডিসেম্বর রাত ৯টা প্রতিপক্ষ ঘানা।