মেসিকে ঘিরেই শাপমোচনের স্বপ্ন আর্জেন্টিনার

আগের কয়েকটি বিশ্বকাপে বাছাই পর্ব উতরানো নিয়েই কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। কাতার বিশ্বকাপের আগে অবশ্য অমন দুশ্চিন্তা করতে হয়নি লিওনেল মেসি অ্যান্ড কোংকে। হেসেখেলেই মধ্যপ্রাচ্যের ফুটবল মহাযজ্ঞের মূলপর্বে নাম লেখায় দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এই আর্জেন্টিনা এখন আছে ফর্ম আর আত্মবিশ্বাসে বৃহস্পতির তুঙ্গে।

আসন্ন কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে ফেভারিটের তালিকায় আছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার নাম

হারতে ভুলেই গেছে ল্যাটিন জায়ান্টরা। দলটির অধিনায়ক ও সেরা তারকা মেসি আছেন দারুণ ফর্মে। যা এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে করে তুলেছে ফেভারিট। আক্রমণ, রক্ষণ এবং মধ্যমাঠ- তিন বিভাগ মিলিয়ে দলটিতে রয়েছে দারুণ ভারসাম্য। গত বিশ্বকাপের নক আউট পর্বের শুরুতে বিদায় নেওয়া দলটা ২০২০ সালে হারে কোপা আমেরিকার ফাইনালে। অবশেষে গতবছর ২৮ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে শিরোপা বন্ধ্যাত্ব দূর করে আর্জেন্টিনা।

এ বছর ইতালিকে হারিয়ে তারা জেতে কনমেবল-উয়েফা কাপ। এবার আসল লক্ষ্য পূরণের পালা তাদের। ২০১৪ সালে তো শিরোপার খুব কাছেই ছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু ওই আসরে অতিরিক্ত সময়ের গোলে মেসিদের হারিয়ে চতুর্থ বিশ্বকাপ জেতে জার্মানি। তাই এবারের আসরটা মেসি এবং আর্জেন্টিনার জন্য শাপমোচনের উপলক্ষ্য।

তারকা: আর্জেন্টিনা দলের সবচেয়ে বড় তারকা লিওনেল মেসি। কাতারেই ফুটবল ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপটি খেলতে যাবেন তিনি। আসরটা রাঙিয়ে দিতে চান মেসি। অন্তত তার জন্য হলেও বিশ্বকাপ জিততে চায় আর্জেন্টিনা। একটি মাত্র শিরোপাই সাতবারের বর্ষসেরা ফুটবলারকে নিয়ে যেতে পারে সর্বকালের সেরার কাতারে।

যদিও কেউ কেউ মেসিকে এখনও সেরা হিসেবে দাবি করেন। এ নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। কাতারের সোনালি ট্রফি মুছে দিতে পারে সেই বিতর্ক। বিতর্ক মুছে ফেলতে পারলে ডিয়েগো ম্যারাডোনাকেও ছাড়িয়ে যাবেন মেসি। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ গোল এবং ম্যাচ খেলার দুই রেকর্ডই অধিনায়কের। ২০০৫ সালে অভিষেক হয় মেসির। এ পর্যন্ত ১৬৪ ম্যাচে ৯০টি গোল করেছেন তিনি।

প্রধান কোচ: ২০১৮ বিশ্বকাপে শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেওয়ার পর সরে দাঁড়ান প্রধান কোচ জর্জ সাম্পাওলি। ওই সময় তার সহকারী ছিলেন লিওনেল স্কালোনি। সাম্পাওলির বিদায়ের পর স্কালোনির হাতেই তুলে দেওয়া হয় আর্জেন্টিনার দায়িত্ব। একটা সময় তিনি মেসি, ডি মারিয়াদের সতীর্থ ছিলেন। তার অধীনে মেসিরা ভালোই পারফর্ম করছেন। এবার স্কালোনির স্বপ্ন আরও বড়। খেলোয়াড়ি জীবনে বিশ্বকাপ জিততে না পারার আক্ষেপটা কোচের ভূমিকায় ঘোচাতে চান তিনি।

কিংবদন্তি: ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা তারকা ডিয়েগো ম্যারাডোনা। তার অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা। ওই আসরেই কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি গোল করেন তিনি। ৬০ মিটার দূর থেকে বল টেনে নিয়ে ইংলিশ পাঁচ ফুটবলারকে ঘোল খাইয়ে ম্যারাডোনা যেভাবে গোলটি করেছিলেন সেটিকে শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।

ওই ম্যাচেই হাত দিয়ে ইংল্যান্ডের জালে বল জড়ান তিনি। যা এড়িয়ে গেছে রেফারির চোখ। পরবর্তীতে ম্যারাডোনার হাত দিয়ে গোলটিকে ‘ঈশ্বরের হাত’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়। মাত্র ১৬ বছর বয়সে আর্জেন্টিনার জার্সিতে অভিষেক হয় ম্যারাডোনার। দেশের হয়ে ৯১টি ম্যাচে ৩৪টি গোল করের তিনি। পরের আসরের ফাইনালে জার্মানির কাছেই হারেন ম্যারাডোনা অ্যান্ড কোং। ১৯৯১ সালে নিষিদ্ধ কোকেনসহ গ্রেপ্তার হন তিনি। ছাড়া পেয়ে ফুটবলেও ফিরে আসেন ছিয়াশির বিশ্বজয়ের নায়ক।

কিন্তু ১৯৯৪ বিশ্বকাপ ম্যারাডোনা শেষ করতে পারেননি। ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে নিষিদ্ধ হন। ক্লাব ফুটবল ক্যারিয়ারেও সফল ছিলেন ম্যারাডোনা। ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলির ইতিহাসের সেরা কিংবদন্তি তিনি। অনেকের মতে, মাদকদ্রব্যে আসক্ত না হলে ম্যারাডোনা আরও সাফল্য পেতে পারতেন। ছাড়িয়ে যেতে পারতেন পেলেকে। ২০২০ সালের নভেম্বরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৬০ বছর বয়সী ম্যারাডোনা। বলা বাহুল্য, খেলোয়াড় ভূমিকায় যতটা সফল ছিলেন ম্যারাডোনা, ততটাই ব্যর্থ ছিলেন কোচ হিসেবে।

আর্জেন্টিনা:

গ্রুপ ‘সি’: আর্জেন্টিনা, সৌদি আরব, মেক্সিকো, পোল্যান্ড

ফিফা র‌্যাঙ্কিং: ৩

বিশ্বকাপ রেকর্ড:

১৯৩০: রানার্সআপ
১৯৩৪: প্রথম রাউন্ড
১৯৩৮-৫৪: অংশ নেয়নি
১৯৫৮-৬২: গ্রুপপর্ব
১৯৬৬: কোয়ার্টার ফাইনাল

১৯৭০: বাছাইপর্ব
১৯৭৪: দ্বিতীয় রাউন্ড
১৯৭৮: চ্যাম্পিয়ন
১৯৮২: দ্বিতীয় রাউন্ড
১৯৮৬: চ্যাম্পিয়ন

১৯৯০: রানার্সআপ
১৯৯৪: শেষ ১৬
১৯৯৮: কোয়ার্টার ফাইনাল
২০০২: গ্রুপপর্ব
২০০৬-১০ কোয়ার্টার ফাইনাল

২০১৪: রানার্সআপ
২০১৮: শেষ ১৬

গ্রুপপর্বের ম্যাচ:

২২ নভেম্বর: আর্জেন্টিনা-সৌদি আরব, বিকেল ৪টা
২৬ নভেম্বর: আর্জেন্টিনা-মেক্সিকো, রাত ১টা
৩০ নভেম্বর: পোল্যান্ড-আর্জেন্টিনা, ১টা