২০১০ সালেই বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ২০২২ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক দেশের বিষয়ে। মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিক দেশ কাতারকে দেওয়া হয় এই টুর্নামেন্টের আয়োজক স্বত্ব। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মাঝে সম্প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কাতার।

fifa world cup qatar 2022 stadiumকাতার বিশ্বকাপের ৮ ভেন্যু ও চমকপ্রদ সব তথ্য

ফিফার একাংশের দাবি ছিল, মোটা অঙ্কের অর্থ ঘুষ দিয়ে আয়োজক হওয়ার সুযোগ পেয়েছে কাতার। সেই তর্ক-বিতর্ক এখন অতীত। আর কয়েক দিন পরেই কাতার বসছে ফুটবল মহাযজ্ঞ। ইতোমধ্যে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরে ফেলছেন আয়োজকরা। প্রস্তুতি একেবারে তুঙ্গে। উন্মাদনায় যেন টগবগ করে ফুটছে গোটা বিশ্ব।

নতুন কিছু করে দেখাতে মুখিয়ে আছেন কাতারের স্থানীয় আয়োজক কমিটি। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এশিয়া মহাদেশে বসছে ফুটবল বিশ্বকাপের আসর। সেদিক থেকে আলাদা তাৎপর্যপূর্ণ বহন করছে এই বিশ্বকাপ। ২০০২ সালে যৌথভাবে প্রথমবার এশিয়া মহাদেশে বিশ্বকাপের আয়োজন করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান।

fifa world cup qatar 2022 stadium 01কাতার বিশ্বকাপের ৮ ভেন্যু ও চমকপ্রদ সব তথ্য

আগামী ২০ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ। ফাইনাল ১৮ ডিসেম্বর। এবারের বিশ্বকাপে বেশকিছু অভিনব ঘটনা ঘটতে চলেছে। চিরাচরিত জুন-জুলাইয়ের বদলে এবার শীতকালে বিশ্বকাপ হতে চলেছে। যেসব ভেন্যুতে খেলা হবে তার প্রতিটিই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ইসলামিক দেশ হওয়া সত্ত্বেও ম্যাচ চলাকালীন মাঠ এবং মাঠের বাইরে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে বিয়ার কেনার।

এবারের বিশ্বকাপ খেলা হবে কাতারের পাঁচটি শহরের আটটি স্টেডিয়ামে। গ্রুপ লিগ থেকে ফাইনালের মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হবে এসব স্টেডিয়ামে। গোটা বিশ্ব এখন অপেক্ষার প্রহর গুণছে। উত্তেজনা বাড়ছে কয়েকগুণ। কাতারজুড়ে তো অনেক দিন ধরেই উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে। চলুন তাহলে সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক বিশ্বকাপের আট ভেন্যুর চমকপ্রদ সব তথ্য।

আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়াম: বিশ্বকাপের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আল রায়ান স্পোর্টিং ক্লাবের ঘরের মাঠ আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে। কাতার বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজন করার জন্যই তৈরি করা হয়েছে এই স্টেডিয়াম। ২০০৩ সালে প্রথমে এই স্টেডিয়ামটি তৈরি করা হয়েছিল। সেইসময় দর্শকদের আসন সংখ্যা ছিল ২১,২৮২। ২০১৫ সালে স্টেডিয়ামটি ভেঙে ফেলা হয়। তারপর নতুন করে ফের স্টেডিয়ামটি তৈরি করা হয়।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে নবরূপে সাজিয়ে উন্মোচিত হয় আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়াম। ভেন্যুটি মধ্য দোহা থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমের শহর আল রায়ানে অবস্থিত। এই স্টেডিয়ামের নকশা, স্থানীয় ঘরবাড়ি, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটায়। স্টেডিয়ামের নকশা বালির টিলা এবং ইসলামিক স্থাপত্য দ্বারা অনুপ্রাণিত। স্টেডিয়ামের সামনের দিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মরভূমির ফ্লোরা ও ফনাদের।

আল রায়ান স্টেডিয়াম: ৪০ হাজার আসন সংখ্যা রয়েছে আল রায়ান স্টেডিয়ামের। বিশ্বকাপের পর স্টেডিয়ামটির ফের ভোলবদল হবে।

খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম: ১৯৭৫ সালে নির্মিত এই স্টেডিয়ামের বর্তমান দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৪৮ হাজার।

লুসাইল স্টেডিয়াম: স্টেডিয়ামটি নতুনভাবে নির্মিত হয়েছে কাতার বিশ্বকাপের আগে। এর আসন সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। কাতারের স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক স্টেডিয়াম এটি।

আল বায়াত স্টেডিয়াম: কাতারের আল খোরে অবস্থিত আল বায়াত স্টেডিয়াম। যার দর্শক আসন সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজারের কাছাকাছি।

রাস আবু আবুদ স্টেডিয়াম: রাস আবু আবুদ স্টেডিয়ামের ভোলবদলে তৈরি হয়েছে স্টেডিয়াম ৯৭৪। প্রায় ৪০ হাজার দর্শক খেলা দেখতে পারবেন এই মাঠে। বিশ্বকাপের মোট ৭টি ম্যাচ আয়োজিত হবে এখানে।

আল সুমামাহ স্টেডিয়াম: আল সুমামাহ স্টেডিয়াম কাতারের আল সুমামাহ এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে। এটি দেখতে অনেকটা টুপির মতো। এখানকার আসন সংখ্যা ৪০ হাজার।

আল জানুব স্টেডিয়াম: আল ওয়াক্রাহ স্টেডিয়ামটির নাম পরিবর্তন করে করা হয়েছে আল জানুব স্টেডিয়াম। ২০১৯ সালে উদ্বোধন হয়েছে স্টেডিয়ামটির। এই স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৪০ হাজার।

চমকের অবশ্য এখানেই শেষ নয়। মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম কোনো দেশ বিশ্বকাপের আয়োজক হচ্ছে। ফলে তা যেন ধুমধাম করেই হবে তা বলা বাহুল্য। বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করতে কোন ঘাটতি রাখতে নারাজ কাতার প্রশাসন। দেশের পাঁচ শহরের আটটি নান্দনিক স্টেডিয়ামে বসবে এই মহাযঞ্জ। তবে দৃষ্টি যে আলাদা করে থাকবে ফাইনালের ভেন্যু লুসাইল আইকনিকের দিকে তা বলাই বাহুল্য।

৮০ হাজার ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট স্টেডিয়ামের প্রতিটি প্রান্তেই যে শিল্পী তার তুলির অপূর্ব নিখুঁত ছোঁয়া দিয়েছেন। জলের প্রতিবিম্বাকৃতি এবং স্যাডল-ফর্মের ছাদের এই নির্মাণশৈলীকে ওপর থেকে দেখলে মনে হবে যেন এটি একটি ভাসমান মাঠ। মাঠে ঢুকতে দর্শকদের একটি বিশেষ সেতু পার হতে হবে। চারপাশে থাকবে কৃত্রিম জলের ফোয়ারা। পুরো স্টেডিয়াম চালিত হবে নিজস্ব সৌরশক্তির মাধ্যমে।

পাশাপাশি গরমের হাত থেকে রক্ষা পেতে স্টেডিয়ামের ওপরে থাকবে কাচের বিশেষ আবরণ। নান্দনিকতায় লুসাইলের সঙ্গে টেক্কা দিতে পারে আল বায়েত স্টেডিয়াম। পুরোটাই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। স্টেডিয়ামের মধ্যেই রয়েছে বিলাসবহুল একাধিক হোটেল। যার ব্যালকনি থেকে দাঁড়িয়ে বা বসে কফি খেতে খেতে উপভোগ করতে পারেন বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচও।

দোহার রাস আবু আবোদ স্টেডিয়ামটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে চলতি বছরেই। স্টেডিয়ামটির ধারণ ক্ষমতা ৪০ হাজার। স্টেডিয়ামের দু’পাশেই থাকছে কৃত্রিম লেক। যেখানে ফুটবল বিশ্বকাপের পর অন্য খেলাগুলোর জন্যও আবু আবোদ স্টেডিয়ামে করা হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা।

দোহা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আল থুম্মা স্টেডিয়াম। মরুভূমির বুকে যেন ঠিক যেন এক ফুটন্ত পদ্ম। পুরুষদের টুপিরই অবয়বের মতো দেখাবে এই অত্যাধুনিক আশ্চর্যকে।

আল থুম্মা স্টেডিয়ামের জন্য মরুভূমির ভেতরেই গড়ে তোলা হয়েছে পুরো একটা আস্ত শহর। আর তা কাতার বলেই সম্ভব হয়েছে। আর এটি গড়ে তোলার কাজটি করেছে কাতার সরকার।

বিশ্বকাপের একমাত্র সবুজ স্টেডিয়ামের তকমা পেয়েছে আল রায়ান শহরের এজুকেশন সিটি। এখানেই হবে কোয়ার্টার ফাইনালের সব ম্যাচ। ইতোমধ্যে উদ্বোধন হওয়া স্টেডিয়ামটি খরচের হিসেবে কাতারের সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্টেডিয়াম। বাহরিন থেকে মাত্র ৫১ মিনিট দূরের পথ স্টেডিয়ামটি।

আহমদে বিন আলি স্টেডিয়াম যেন থ্রিডি অ্যানিমেটেড ছবি। যেন একখন্ড নীল চাঁদের ফলি নেমে এসেছে পৃথিবীর বুকে। স্টেডিয়ামের ওপরের ফাঁকা স্থানটি চাইলেই ঢেকে ফেলা যাবে বিশেষ কাচে। বসার চেয়ারগুলোকে মোশন করা যাবে ইচ্ছেমতো অর্থাৎ যেভাবে ইচ্ছে সচল করা যাবে। পুরো স্টেডিয়ামের আলোকসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ রকমের বাতি। স্টেডিয়ামটির দর্শক ধারণক্ষমতা প্রায় ৪৫ হাজার।

খলিফা স্টেডিয়ামটি কাতারের জাতীয় স্টেডিয়াম। যার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৭৬ সালে। তবে বিশ্বকাপ উপলক্ষে আমূল পরিবর্তনের পাশাপাশি সংস্কার করা হয়েছে এই স্টেডিয়ামটির। আসনের সংখ্যা কমিয়ে করা হয়েছে ৪৫ হাজার।

বিশ্বকাপের জন্য পুরোপুরি বদলে ফেলা হয়েছে আল ওয়াকরা স্টেডিয়ামটি। নাম পরিবর্তন করে হয়েছে আল জানব। দোহার ঐতিহ্যবাহী নৌকার আকৃতিতে বানানো এই হয়েছে এই স্টেডিয়ামটি। বিশাল আয়তনের কারণে এটি আপাতত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ৪০ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামটির পার্কিং ব্যবস্থাও অনবদ্য। একসঙ্গে ৫০ হাজার গাড়ি পার্ক করা যাবে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.