কাতার বিশ্বকাপ: অঘটনের আশায় তিউনিসিয়া

২০০৬ সালে বিপর্যয় নেমে আসে তিউনিসিয়ার ফুটবলে। এ সময় দলটির কয়েকজন অভিজ্ঞ ফুটবলার অবসর নেন। যার প্রভাব পড়েছে মাঠের খেলায়। ২০১০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপের মূলপর্বের টিকিট কাটতে পারেনি আফ্রিকার দেশটি। চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপ দিয়ে প্রত্যাবর্তন হয় তাদের। কিন্তু ফেরাটা সুখের হয়নি। যথারীতি সেই গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় তিউনিসিয়াকে।

কাতার বিশ্বকাপে চমক দেখাতে চায় আফ্রিকান জায়ান্ট তিউনিসিয়া

এবারের কাতার বিশ্বকাপেও তাদের জন্য নক আউট পর্বে ওঠাই বড় চ্যালেঞ্জ। গ্রুপের শক্তিশালী দুই দল ফ্রান্স ও ডেনমার্ক তাদের আতঙ্কের নাম। ইউরোপিয়ান দুই জায়ান্টের একটির বিরুদ্ধে অঘটন ঘটাতে চায় তিউনিসিয়া। আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ভাবছে না তারা। কাজটা কঠিন। কিন্তু অসম্ভব নয়। তিউনিসিয়াকে আশা দেখাচ্ছে সাম্প্রতিক কালের ফর্ম ও দলের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা।

এই বিশ্বকাপে অভিজ্ঞ দলগুলোর মধ্যে একটি আফ্রিকার দেশটি। দলে সুযোগ পেয়েছেন কিছু তরুণ ফুটবলারও। সবমিলিয়ে তিউনিসিয়া একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়। তবে দল হিসেবে যে পর্যায়েই থাকুক না কেন, আফ্রিকান জায়ান্টরা গ্রুপপর্বের মিশন শুরু করবে আন্ডারডগ হিসেবেই। তবে এই মুহূর্তে একটু জটিলতার মধ্যে পড়েছে দেশটি। তিউনিসিয়ার ফুটবলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চলছে বলে অভিযোগ তুলেছে ফিফা। অভিযোগ প্রমাণ হলে বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ হতে পারে তিউনিসিয়া।

তারকা: তিউনিসিয়ার ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতা ইসাম জেমা। ৩৬ গোল করে অবসর নিয়েছেন তিনি। তার চেয়ে ১২ গোল পিছিয়ে দুইয়ে আছেন ওয়াহবি খাজরি। ২০১৩ সালে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয় এই ফরওয়ার্ডের। ২৪ গোল করা খাজরি এবারের আসরে তিউনিসিয়ার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। আক্রমণভাগে তার সঙ্গী হিসেবে আছেন অভিজ্ঞ আরেক স্ট্রাইকার ইউসুফ এমসাকনি।

এই দুজন ছাড়াও দলটিতে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের অভাব নেই। তবে আলাদাভাবে নজরে থাকার কথা এই ফরওয়ার্ডের। তিউনিসিয়ার হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে খাজরির আবির্ভাব হলেও তিনি মূলত ফরাসি বংশোদ্ভূত। ফ্রান্স অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে একটি ম্যাচও খেলেছিলেন এই তারকা। খাজরি খেলেছেন তিউনিসিয়া যুবদলেও। শেষপর্যন্ত জাতীয় দল হিসেবে আফ্রিকান দেশটিকে বেছে নেন মঁপয়ের এই ফরওয়ার্ড।

প্রধান কোচ: খেলোয়াড় হিসেবে কখনোই তার নামডাক ছিল না। জালেল কাদরি ফুটবল দুনিয়ায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন কোচ হিসেবে। ২২ বছরের কোচিং অভিজ্ঞতা তার। তবে জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে এই প্রথম কাজ করছেন তিনি। ২০১৩ সালে তিউনিসিয়ার সহকারী কোচ হিসেবেও কাজ করেছেন কাদরি।

২০২১ সালে পুরনো ভূমিকায় ফিরে আসেন এই কোচ। এ বছরের জানুয়ারিতে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় দলের দায়িত্ব। ক্লাব ফুটবলে বহু উত্থান-পতন দেখা এই কোচের এবার অভিষেক হবে বিশ্বকাপের ডাগ আউটে। স্বপ্নের অভিষেক রাঙাতে সম্ভাব্য সেরা চেষ্টাটাই করবেন কাদরি।

কিংবদন্তি: তিউনিসিয়ার প্রথম ও একমাত্র ফুটবলার হিসেবে ১০০ ম্যাচের মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন রাধি জায়দি। ১৯৯৬ সালে আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রথমবার পা রাখেন তিনি। ২০০৯ সালে বর্ণিল ক্যারিয়ারের ইতি টানেন এই ডিফেন্ডার। দেশের হয়ে ১০৫ ম্যাচে ৭টি গোল করেছেন জায়দি। ম্যাচ খেলার সংখ্যায় তার সমসাময়িক কয়েকজন ফুটবলারই আছেন।

চোকরি এল ওউয়ার, খালেদ বাদ্রা, খালেদ বিন ইয়াহিয়া, রায়াদ বুয়াজিজির নব্বইর ঘরে থেকে অবসর নিয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজন ফুটবলার ২০০৬ সালে অবসর নেন। তাতে করে তিউনিসিয়ার ফুটবল বড় ধাক্কাই খায়। পরের দুই বছর বিশ্বকাপের টিকিটই পায়নি দলটি। বাছাইপর্বেই থমকে যায় তাদের স্বপ্ন।

তিউনিসিয়া:

গ্রুপ ‘ডি’: অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, তিউনিসিয়া, ডেনমার্ক

ফিফা র‌্যাঙ্কিং: ৩০

বিশ্বকাপ রেকর্ড:

১৯৩০-৫৪: ফ্রান্সের অংশ
১৯৫৮: অংশ নেয়নি
১৯৬২: বাছাই
১৯৬৬: নাম প্রত্যাহার

১৯৭০-৭৪: বাছাই
১৯৭৮: গ্রুপপর্ব
১৯৮২-৯৪: বাছাই
১৯৯৮-২০০৬: গ্রুপপর্ব

২০১০-১৪: বাছাই
২০১৮: গ্রুপপর্ব

গ্রুপপর্বের সূচি:

২২ নভেম্বর: ডেনমার্ক-তিউনিসিয়া, সন্ধ্যা ৭টা
২৬ নভেম্বর: তিউনিসিয়া-অস্ট্রেলিয়া, বিকেল ৪টা
৩০ নভেম্বর: তিউনিসিয়া-ফ্রান্স, রাত ৯টা