দল পর্যালোচনা: বৃত্ত ভাঙার চ্যালেঞ্জ ইরানের

গ্রুপের আন্ডারডগ হিসেবে ভাবা হচ্ছে ইরানকে। তাদের বিশ্বকাপ সাফল্যও সমৃদ্ধ নয়। আগের পাঁচবার বিশ্বকাপে অংশ নিলেও দ্বিতীয় ধাপেই বিদায় নিতে হয় তাদের। এবারের আসরটা তাদের জন্য গ্রুপপর্বের বৃত্ত ভাঙার চ্যালেঞ্জ। চার বছর আগে রাশিয়া তো দুর্ভাগ্যক্রমে নক আউট পর্বে ওঠা হয়নি তাদের। গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে মরোক্কোকে হারায় তারা। এরপর স্পেন ও পর্তুগালের অগ্নিপরীক্ষা নিয়েছে ইরান। স্পেনের সঙ্গে ১-০ গোলে হারলেও পর্তুগিজদের ১-১ গোলে রুখে দিয়েছিল এশিয়ান পরাশক্তিরা।

ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপে কখনো গ্রুপপর্বের বাধা পাড়ি দিতে পারেনি ইরান

স্পেন ও পর্তুগাল সমান ৫ পয়েন্ট নিয়ে শেষ ষোলোতে পাড়ি জমালেও বিদায় নেয় ইরান। তাদের সংগ্রহ ছিল ৪ পয়েন্ট। সেই তুলনায় এবার অবশ্য অতটা কঠিন গ্রুপে পড়তে হয়নি ইরানকে। গ্রুপে ইংল্যান্ড ছাড়া বাকি দুই দল যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েলস প্রায় তাদের সমশক্তির। ইরান আশা দেখতেই পারে। কিন্তু তাদের জন্য অস্বস্তি হচ্ছে অনভিজ্ঞ দল। ইরানের বেশির ভাগ ফুটবলারই জাতীয় দলে খেলছেন অল্প কিছুদিন ধরে। দেশের হয়ে অন্তত ৩৫টি ম্যাচ খেলা ফুটবলারের সংখ্যাটা পাঁচ। অভিজ্ঞ কোচ কার্লোস কুয়েরোজ অবশ্য এবার তারুণ্যেই আস্থা রাখছেন বেশি। এখন শিষ্যরা সেটার প্রতিদান দিতে পারলেই হলো।

তারকা: ইরান ফুটবল দলের গোলমেশিন সরদার আজমুন। দেশের হয়ে ৬৫ ম্যাচে ইতোমধ্যে ৪১টি গোল কওে ফেলেছেন তিনি। অনেকেই তার মধ্যে পূর্বসুরি আলির ছায়া দেখছেন। ২৭ বছর বয়সী এই ফরওয়ার্ডই এবারের বিশ্বকাপে ইরানের তুরুপের তাস। দলের আক্রমণভাগের সুতোটা থাকছে তার কাছেই। ২০১৪ সালে অভিষেক হয় আজমুনের। বর্তমানে তিনি খেলছেন জার্মান ক্লাব বায়ার লেভারকুজেনের হয়ে। এর আগে রাশিয়ার ক্লাব জেনিস সেন্ট পিটার্সবার্গের হয়ে ৭৯ ম্যাচে ৫২টি গোল করেছেন ২৭ বছর বয়সী এই ফরওয়ার্ড।

প্রধান কোচ: ইরানের সবচেয়ে বড় শক্তি ডাগ আউটে। দলটির পর্তুগিজ কোচ কার্লোস কুয়োরোজের কোচিং অভিজ্ঞতা ৩৩ বছরের। এ সময়ে পর্তুগাল, ইরান, কলম্বিয়ার মতো দলকে কোচিং করিয়েছেন তিনি। পর্তুগালে দুই মেয়াদে কাজ করেছেন কুয়েরোজ। ইরানেও এটা চলছে তার দ্বিতীয় অধ্যায়। ক্লাব ফুটবলে স্পোর্টিং লিসবন, রিয়াল মাদ্রিদের প্রধান কোচ হিসেবেও কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তার। ইরানের কোচ হিসেবে এটা হতে যাচ্ছে তার তৃতীয় বিশ্বকাপ। আগের দুই বিশ্বকাপেই গ্রুপপর্বে বিদায় নিয়েছে কুয়েরোজের দল। এবার সেই অভিজ্ঞতা কাতারে কাজে লাগাতে চান তিনি।

কিংবদন্তি: ইরানের সর্বকালের সেরা ফুটবলার আলি দাই। আন্তর্জাতিক ফুটবলে দীর্ঘ সময় সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনটা ছিল এই ফরওয়ার্ডের দখলেই। গত বছর তার রেকর্ড ভেঙে বিশ্বরেকর্ড গড়েন পর্তুগাল অধিনায়ক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। তার গোল এখন ১১৭টি। ‘সিআর সেভেন’কে জায়গা দিতে গিয়ে বিশ্বের সব গোলদাতাদের তালিকার দুইয়ে নেমে গেছেন আলি। ইরানের হয়ে ১৪৯ ম্যাচে ১০৯ গোল করেছেন তিনি। দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেও সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলাদের তালিকায় দুইয়ে আছেন আলি। ১৯৯৩ সালে অভিষেক হয় তার। ২০০৬ সালে দেশের জার্সিতে শেষ ম্যাচটি খেলেছেন তিনি।

ইরান:

ফিফা র‌্যাঙ্কিং: ২০

গ্রুপ ‘বি’: ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, ওয়েলস

বিশ্বকাপ রেকর্ড:

১৯৩০-৩৮ ফিফার সদস্য নয়
১৯৫০-১৯৭০: অংশ নেয়নি
১৯৭৪: বাছাই
১৯৭৮: গ্রুপপর্ব
১৯৮২: নাম প্রত্যাহার

১৯৮৬: বহিষ্কার
১৯৯০-৯৪: বাছাই
১৯৯৮: গ্রুপপর্ব
২০০২: বাছাই

২০০৬: গ্রুপপর্ব
২০১০: বাছাই
২০১৪-১৮: গ্রুপপর্ব

গ্রুপপর্বের ম্যাচ:

২১ নভেম্বর: ইংল্যান্ড-ইরান, সন্ধ্যা ৭টা
২৫ নভেম্বর: ইরান-ওয়েলস, বিকেল ৪টা
২৯ নভেম্বর: ইরান-যুক্তরাষ্ট্র, রাত ১টা