দল পর্যালোচনা: ইতিহাস গড়ার চ্যালেঞ্জ কাতারের

এশিয়ান কাপ কিংবা আরব কাপ। কাতারের দৌড় ওই পর্যন্তই। কখনোই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে পারেনি তারা। বাছাইপর্বের বাধাই পেরুতে পারেনি দলটি। এবার অবশ্য বাছাইয়ের অগ্নিপরীক্ষায় যেতে হয়নি কাতারকে। স্বাগতিক দেশ হওয়ায় প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মূলপর্বের টিকিট পেয়ে গেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। এশিয়ান ফুটবলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আলো ছড়াতে চায় অভিষেক বিশ্বকাপে।

কাতারের চোখ নক আউটে

মাঠের খেলায় বিশ্বকাপে বড় কিছুর স্বপ্ন নেই কাতারের। তাদের চোখ নক আউট পর্বে। এ যাত্রায় গ্রুপপর্ব পার হতে পারলেই সফল দলটি। ‘এ’ গ্রুপটা তুলনামূলক কঠিন নয়। স্বাগতিক হিসেবে এই বাড়তি সুবিধাটা প্রায় সবদেশই পেয়ে থাকে। গ্রুপে কাতারের তিন প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস, সেনেগাল ও ইকুয়েডর। শক্তি ও সামর্থ্যরে সুবিচার করতে পারলে শেষ ষোলোতে উঠতে পারবে কাতার। এ জন্য সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তারাই পাচ্ছে। কাতার খেলবে ঘরের মাঠে; নিজেদের দর্শকদের সামনে।

মাঠের পারফরম্যান্সের চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ কাতারের জন্য বিশ্বকাপ সফলভাবে আয়োজন করাটা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি আসর হতে যাচ্ছে এটা। কাতার তো বটেই, মধ্যপ্রাচ্যেই এটা হতে যাচ্ছে প্রথম বিশ্বকাপ। তাদের স্বাগতিক স্বত্ব পাওয়া নিয়ে জল অনেক দূর গড়িয়েছিল। কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ফিফা সাবেক সভাপতি সেপ ব্ল্যাটার ও উয়েফার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মিশেল প্লাতিনি পর্যন্ত নিষিদ্ধ হয়েছিলেন।

বিশ্বকাপ সফলভাবে আয়োজন করতে সম্ভাব্য সবরকম প্রস্তুতিই সেরে রেখেছে কাতার। পশ্চিমা বিশ্বের কিছু সংস্কৃতির সঙ্গে কাতারের সংস্কৃতি অনেকটাই সাংঘার্ষিক। এসব ক্ষেত্রে আনা হয়েছে ভারসাম্য। আয়োজন সুন্দর এবং সফল করতে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। এই বিশ্বকাপে মাঠের খেলার চেয়ে স্বাগতিক দেশ হিসেবেই বেশি আলোচনায় থাকছে কাতার। ‘টাকার কুমির’ খ্যাত কাতার সর্বকালের সেরা বিশ্বকাপটা আয়োজন করতে চাচ্ছে।

তারকা: কাতারেরর সবচেয়ে বড় শক্তি সিনিয়র কয়েকজন ফুটবরার। এদের মধ্যে অন্যতম অধিনায়ক হাসান আল-হাইদস। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৬৬টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। দলের নেতৃত্ব জোয়ালও তার কাঁধেই। তার জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে সমসাময়িক কিছু সতীর্থ পাওয়া। আবদেল করিম হাসান, করিম বুদিয়াফ, আব্দুল আজিজ হাতেম, আকরাম আফিফ, আলময়েজ, বুয়ালেম খুকি- এসব ফুটবলার দীর্ঘদিন ধরে একই ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করছেন। এই সুবিধা ও অভিজ্ঞতা বিশ্বকাপে কাজে লাগাতে চান তারা।

প্রধান কোচ: ফেলিক্স সানচেজের অধীনে কয়েক বছরে এশিয়ান ফুটবলের পরাশক্তি হয়ে উঠেছে কাতার। তার কোচিংয়ের সুবাদে ২০১৯ সালে এশিয়ান কাপ যেতে কাতার। ১০ বারের চেষ্টায় কাতারের স্বপ্নপূরণ করেন তিনি। এবার স্প্যানিশ কোচের অধীনে বিশ্বকাপটা স্মরণীয় করে রাখার স্বপ্ন দেখছে দেশটি। ২০১৭ সালে কাতারের দায়িত্ব নেন এই কোচ।

কিংবদন্তি: কাতারের ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম সেরা ফুটবলার মানসুর মুফতাহ। দীর্ঘ দুই যুগ হয়ে খেলেছেন দেশের জার্সিতে। ১৯৭৬ সালে অভিষেক, ২০০০ সালে অবসর নেন তিনি। দেশের ফুটবল ইতিহাসে তিনিই সর্বোচ্চ গোলদাতা। ৮১ ম্যাচে ৪২টি গোল করেছেন মানসুর। তার খুব কাছেই আছেন মুবারাক মুস্তফা (৪১)। মুস্তফা পারেননি রেকর্ড ভাঙতে। তবে দুজনকেই ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে আলময়েজ আলির। ইতোমধ্যে ৩৯টি গোল করেছেন আলময়েজ।

কাতার:

গ্রুপ ‘এ’: কাতার, নেদারল্যান্ডস, সেনেগাল ও ইকুয়েডর

ফিফা র‌্যাঙ্কিং: ৫০

বিশ্বকাপ রেকর্ড:

১৯৩০-৭০: যুক্তরাজ্যের অংশ
১৯৭৪: অংশ নেয়নি
১৯৭৮-২০১৮: বাছাই
২০২২: স্বাগতিক হিসেবে অংশগ্রহণ

গ্রুপ পর্বে ম্যাচ:

২১ নভেম্বর : কাতার-ইকুয়েডর, রাত ১০টা
২৫ নভেম্বর : কাতার-সেনেগাল, সন্ধ্যা ৭টা
২৯ নভেম্বর: কাতার-নেদারল্যান্ডস, রাত ৯টা