দল পর্যালোচনা: নেদারল্যান্ডসের দুঃখ ঘোচানোর মিশন

ওয়েসলি স্নেইডার, আরিয়েন রোবেন, রবিন ফন পার্সির কথা এতো দ্রুত ভুলে যাওয়ার কথা নয়। তাদের যোগ্য উত্তরসূরি পেয়েছে নেদারল্যান্ডস। এই মুহূর্তে ডাচ শিবিরে আছেন জর্জিনিও ভিনালডাম, মেম্ফিস ডিপেই, ভার্জিল ফন ডাইক, ফ্রেঙ্কি ডি জং, রোনাল্ড আরাজু, ম্যাত্থিস ডি লিখটের মতো তারকারা। মধ্যমাঠ, আক্রমণ, কিংবা রক্ষণ- তিন জায়গাতেই যথেষ্ঠ শক্তিশালী নেদারল্যান্ডস।

নেদারল্যান্ডসের দুঃখ ঘোচানোর মিশন

খুব স্বাভাবিকভাবেই এবারের কাতার বিশ্বকাপে ফেভারিটের তালিকায় আছে তারা। ডাচদের একটা বড় সমস্যা আছে। সেটা হচ্ছে ফাইনালের চাপ নিতে না পারা। ইতিহাসের প্রথম ও একমাত্র দল হিসেবে তিনটি ফাইনাল খেলেও শিরোপা জিততে পারেনি তারা। এবারের আসর তাদের জন্য ফাইনাল দুঃখ ঘোচানোর।

একই সঙ্গে কাতারের মহাযজ্ঞ কমলা শিবিরের জন্য প্রত্যাবর্তন রাঙানোরও উপলক্ষ্য। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের বাধা উতরাতে পারেনি তারা। এবার বেশ দাপটের সঙ্গেই মূলপর্বে জায়গা করে নিয়েছে নেদারল্যান্ডস। গ্রুপপর্বের প্রতিপক্ষরা তাদের চেয়ে তুলনামূলক কম শক্তিধর কাতার, ইকুয়েডর এবং সেনেগালের বিপক্ষে তাদের জয় নিয়ে সংশয় খুব কমই।

তারকা: নেদারল্যান্ডস দলে তারকার অভাব নেই। তবে সবচেয়ে বড় তারকা ফন ডাইক। দলের নেতৃত্বের জোয়াল এখন লিভারপুল ডিফেন্ডারের কাছেই। বিপদসীমা সামলাবার পাশাপাশি গোল করার অভ্যাসও আছে তার। কিন্তু সেরা সময়টা পেছনে ফেলে এসেছেন তিনি। গত বছর তো ব্যালন ডি’অর জয়ের লড়াইয়েও ছিলেন ফন ডাইক।

যদিও শেষপর্যন্ত লিওনেল মেসির কাছে হেরে যান তিনি। তবে সেরা ডিফেন্ডারের তকমাটা ঠিকই পেয়েছেন লিভারপুল তারকা। এবারের বিশ্বকাপে রক্ষণ সামলানোর মূল দায়িত্বটা তার কাঁধেই। সঙ্গে নেতৃত্বের বোঝা। এই দুইয়ে মিলে কাতারে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে তাকে। পরীক্ষায় উতরাতে তিনি পাশে পাচ্ছেন একঝাঁক প্রতিভাবান ফুটবলারকে।

অভিজ্ঞ ও সিনিয়র হিসাবে প্রত্যাশার চাপ ফন ডাইক কতটা সামলাতে পারেন সেটাই দেখার। বর্তমানে তিনি ইংলিশ ক্লাব লিভারপুলে খেলছেন। ২০১৫ সাল থেকে ডাচদের হয়ে খেলছেন এই ডিফেন্ডার। দেশের হয়ে তার ম্যাচ সংখ্যা ৪৯টি। ইনজুরি আর বিশ্রামে না থাকলে উয়েফা নেশনস লিগেই হয়তো ম্যাচের ফিফটি হয়ে যেত তার।

প্রধান কোচ: গত বিশ্বকাপের টিকিট না পাওয়া নেদারল্যান্ডস এবার বেশ দাপটের সঙ্গেই বড় মঞ্চে জায়গা করে নিয়েছে। তাদের এই সাফল্যের রূপকার দুজন। একজন সাবেক কোচ এবং অন্যজন বর্তমান কোচ। কার্যত কিংবদন্তি কোচ লুইস ফন গালকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে দেশটি। কোচিং ক্যারিয়ারে বহু ঘাত-প্রতিঘাত সয়ে টিকে থাকা ডাচ কোচ এবার নেদারল্যান্ডসের স্বপ্নপূরণ করতে চান। তার নেতৃত্বে প্রায় দুই বছর ধরে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলছে নেদারল্যান্ডস।

কিংবদন্তি: নেদারল্যান্ডস ফুটবলে যুগে যুগে এসেছেন কিংবদন্তিরা। ডেনিস বার্গক্যাম্প, ইয়োহান ক্রুইফ, মার্কো ফন বাস্তেন, ফ্রাঙ্ক রিজকার্ড, এডউইন ফন সার, রোনাল্ড কোম্যান, রুদ গুলিত, রবিন ফন পার্সি। এদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ক্রুইফ। খেলোয়াড়ি এবং কোচিং দুই ভূমিকাতেই নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি।

‘তিকিতাকা’ ছন্দের অন্যতম প্রবর্তক ক্রুইফ। তার ক্যারিয়ারে একমাত্র প্রাপ্তি বিশ্বকাপ জিততে না পারা। কীভাবেই বা সোনালি ট্রফি জিতবেন তিনি, তার দলই তো চিরকালীন আক্ষেপের আগুনে পুড়ছে। তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে ১৯৭৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল নেদারল্যান্ডস। তবে দেশের হয়ে খুব বেশি ম্যাচ খেলেননি তিনি।

১১ বছরের ক্যারিয়ারে ক্রুইফের ম্যাচ সংখ্যা ৪৮টি। ডাচদের সাবেক অধিনায়ক ৩৩টি গোলও করেছেন। ১৯৬৬ সালে কমলা রঙের জার্সিতে অভিষেক হয় ক্রুইফের। ১৯৭৭ সালে অবসর নেন তিনি। ক্রুইফ কেবল নেদারল্যান্ডসেরই নন, স্পেনের বিখ্যাত ক্লাব বার্সেলোনার ইতিহাসের অন্যতম সেরা কোচ ও খেলোয়াড় ছিলেন।

নেদারল্যান্ডস:

গ্রুপ ‘এ’: কাতার, ইকুয়েডর, সেনেগাল, নেদারল্যান্ডস

ফিফা র‌্যাঙ্কিং: ৮

বিশ্বকাপ রেকর্ড:

১৯৩০: অংশ নেয়নি
১৯৩৪: শেষ ১৬
১৯৩৮: শেষ ১৬
১৯৫০: অংশ নেয়নি
১৯৫৪: অংশ নেয়নি

১৯৫৮-৭০: বাছাইপর্ব
১৯৭৪: রানার্সআপ
১৯৭৮: রানার্সআপ
১৯৮২: বাছাইপর্ব
১৯৮৬: অংশ নেয়নি

১৯৯০: শেষ ১৬
১৯৯৪: কোয়ার্টার ফাইনাল
১৯৯৮: সেমিফাইনাল
২০০২: বাছাইপর্ব
২০০৬: শেষ ১৬

২০১০: রানার্সআপ
২০১৪: সেমিফাইনাল
২০১৮: বাছাইপর্ব

গ্রুপ পর্বের ম্যাচ:

২১ নভেম্বর: সেনেগাল-নেদারল্যান্ডস; রাত ১০টা।
২৫ নভেম্বর: নেদারল্যান্ডস-ইকুয়েডর; রাত ১০টা।
২৯ নভেম্বর: কাতার-নেদারল্যান্ডস; রাত ৬টা।