দেয়াল ভাঙার চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সুখানুভূতির আশ্রয় শুধু ওয়ানডে ফরম্যাট। সাদা বলের আরেক ফরম্যাট টি-টোয়েন্টি রীতিমতো দুঃখ গাঁথাই হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ দলের জন্য। ১৩৯ ম্যাচে ৪৭টি জয়। ধুঁকতে থাকা ছবিটা এখানেই স্পষ্ট। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে কল্পনা করতেই টাইগারদের নিয়ে রাজ্যের নৈরাশ্য ভর করে ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝে। কারণ বৈশ্বিক এই আসরে বিবর্ণ বাংলাদেশ দল।

হোবার্টে বাংলাদেশ দল

বিশ্বকাপের গত সাত আসরে বলার মতো কোনো সাফল্য নেই। পূর্ণ সদস্য, টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর বিরুদ্ধে সবেধন নীলমনি একমাত্র জয় এসেছিল ১৫ বছর আগে। অস্ট্রেলিয়ায় এবার বিশ্বকাপের অষ্টম আসর খেলতে গিয়েছে বাংলাদেশ দল। র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকায় এবার সরাসরি বিশ্বকাপে খেলছে টাইগাররা। সোমবার নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হবে।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কদাচিৎই খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ দল। সর্বশেষ খেলেছিল ২০১৫ সালে, সেটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে। অচেনা কন্ডিশনে এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে হারের দেয়াল ভাঙার চ্যালেঞ্জ সাকিব আল হাসানের দলের সামনে। যদিও খোদ অধিনায়কসহ দলের সবাই বিশ্বকাপ দিয়ে প্রথমবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি-টোয়েন্টি খেলতে নামবেন। ২০০৭ সালের পর বিশ্বকাপের মূল পর্বে জয় নেই। সেই আক্ষেপ ঘুচানোর মিশনটা শুরু হবে ডাচদের বিপক্ষে। যদিও আশার পালে হাওয়া নেই খু্ব একটা। বিশ্বকাপে ৩৩ ম্যাচ খেলে ২৫টিতেই হেরেছে টাইগাররা। জয় মাত্র সাতটি।

এবার টুর্নামেন্ট শুরুর আগেও দলটা হারের মিছিলে। নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা চার ম্যাচ হেরেছে সাকিব বাহিনী। পরে প্রস্তুতি ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছেও বিধ্বস্ত হয়েছে দল। হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া দলটার ঘুরে দাঁড়ানো তাই সহজ কর্ম হবে না। তবে এতসব হতাশার মাঝেও মাশরাফি বিন মুর্তজার বুকে আছে ক্ষীণ আশা। সম্প্রতি বিপিএলের দল সিলেট স্ট্রাইকার্সের অনুষ্ঠানে সাবেক এ অধিনায়ক বলেছিলেন, দেখবেন একটা ম্যাচ জিতবেই। কার সাথে জিতবে জানি না, তবে ম্যাচ জিতবো এবার। অগ্রজ মাশরাফির আশাবাদ সাকিব-লিটনদের কানে গিয়েছে কিনা বলা কঠিন। তবে এটুকু সত্য মাশরাফিসহ ১৬ কোটি বাঙালি অপেক্ষায় থাকবে মূল পর্বে একটা জয়ের আনন্দে ভাসতে।

টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিং :

আইসিসির টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৯ নম্বরে। র‌্যাংকিং যাই হোক ক্ষুদে ফরম্যাটে দলগুলোর ব্যবধান কমে আসে। নির্দিষ্ট দিনে ভালো খেলা দলই জয় পায়।

শক্তিমত্তা :

বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সাকিব। বিশ্বকাপের আগের সাত আসরেই খেলেছেন তিনি। অলরাউন্ডার হিসেবে দলের বড় শক্তি তিনি। অধিনায়কের ভারও তার কাঁধে। জয়ের খাতা খুলতে ব্যাটে-বলে তার দিকে তাকিয়ে থাকবে দল। অবশ্য অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের কাতারে লিটন দাস, মুস্তাফিজুর রহমান, নুরুল হাসান সোহান, মেহেদী হাসান মিরাজ, সৌম্য সরকার, তাসকিন আহমেদকেও ধরতে হবে। কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাদের বিচরণের সময় নেহায়েত কম নয়, তারাও ৬-৭ বছর ধরে বড় মঞ্চে খেলছেন। 

দুর্বলতা :

আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিবেচনায় বাংলাদেশের দলটাতে ঘাটতি অনেক। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের কেউই পাওয়ার হিটার নন। স্লগ ওভারে আগুনে ব্যাটিং করার সামর্থ্য নেই কারো। নেই বৈচিত্র্যময় লেগ স্পিনার। তাই শেষ দিকে ওভারপ্রতি ১০ রানের টাগের্টও পাড়ি দিতে পারে না বাংলাদেশ। বোলিংয়ে ডেথ ওভারে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের জায়গায় ঘাটতি আছে টাইগারদের।

বড় তারকা :

সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বড় তারকা সাকিব আল হাসান। টপ অর্ডার বা মিডল অর্ডার ব্যাট করেন তিনি। সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার এ ফরম্যাটে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার আবার দলেরও অধিনায়ক। তার সঙ্গে লিটন দাসকেও রাখা যেতে পারে তারকার তালিকায়। ইনফর্ম এই ব্যাটসম্যান ব্যাটিংয়ের বড় ভরসা। ওপেনিং না করলেও তিনে খেলবেন লিটন। তিন ফরম্যাটেই নিজেকে ব্যাটিং স্তম্ভ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। বিশ্বকাপে তার ব্যাটে রান এবং রানের ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের সবার কাছেই প্রার্থিত। তালিকায় যুক্ত হতে পারতেন মুস্তাফিজুর রহমানও। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ফর্মে নেই তিনি। কাটার মাস্টারের কাটারের ধার চলে গেছে। বরং তার ফর্মহীনতাই চিন্তার কারণ হয়ে গেছে। যদিও বিভিন্ন লিগে খেলা এই বাঁহাতি পেসার হতে পারতেন বোলিংয়ে বাংলাদেশের বড় অস্ত্র।

অভিজ্ঞতা :

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। বিশ্বকাপের প্রথম আসরে ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সুপার এইটে উঠাই সবচেয়ে বড় সাফল্য, আনন্দের অভিজ্ঞতা। তার বাইরে বড় দলের বিপক্ষে ক্রমাগত হারই যেন নিয়তি। যার শৃঙ্খলই এবার ভাঙতে হবে সাকিবদের। বিশ্বকাপের ২০০৯, ২০১০, ২০১২ সালের আসরে কোনো জয় নেই টাইগারদের।  ২০১৪, ২০১৬, ২০২১ সালের আসরে প্রথম রাউন্ডে কয়েকটি জয় এসেছে। তবে মূল পর্বে চৌকাঠে পা রাখতেই জয়শূন্য টাইগাররা।