নাটকীয় হারে বাংলাদেশের বিদায়

বাঁচা-মরার ম্যাচে জ্বলে উঠেছিলেন বাংলাদেশের তরুণ ব্যাটাররা। বোলারদের এনে দেন মজবুত ভিত। কিন্তু শক্তিশালী সংগ্রহ নিয়েও তা আগলে রাখতে ব্যর্থ হলেন বোলাররা। বাজে বোলিংয়ের খেসারত দিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই উইকেটে হেরে গেল টাইগাররা। নাটকীয় এই হারে এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেল গত আসরের রানার্সআপ বাংলাদেশ।

সুইপ শট খেলছেন দাসুন সানাকা

আজ দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ওভারে সাত উইকেটে ১৮৩ রানের বড় সংগ্রহ তোলে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে চার বল বাকি থাকতে কঠিন সমীকরণ মিলিয়ে ফেলে লঙ্কানরা। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে আরব আমিরাতে এটাই সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। টানা দুই হারে কার্যত শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের মিশন। প্রথম ম্যাচেই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করার পর সাত উইকেটে হেরেছিল টাইগাররা।

শেষ চার ওভারে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ ছিল ৪২ রানের পুঁজি আগলে রাখার। ১৭ ও ১৮তম ওভারে টাইগাররা খরচ করে ১৮ রান। ১৯তম ওভারেই সব এলোমেলো হয়ে গেল। অভিষেক ম্যাচে শুরুর দিকে দুর্দান্ত বোলিং করতে থাকা ইবাদত হোসেন হজম করলেন ১৭ রান। ম্যাচটা কার্যত শেষ হয়ে গেছে ওখানেই। শেষ ওভারে লঙ্কানদের আট রানের যে প্রয়োজনীয়তা ছিল সেটা তারা মিলিয়ে ফেলে সহজেই। শেখ মেহেদি পারলে না জাদুকারি কিছু করতে।

বাংলাদেশের শক্তিশালী সংগ্রহের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ

বড় লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের শুরু থেকেই দারুণ ব্যাটিং করতে থাকেন লঙ্কান ওপেনার ও উইকেটকিপার কুশল মেন্ডিস। ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কাকে নিয়ে কার্যকর জুটি গড়েন মেন্ডিস। এরপর ইবাদতের দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ। বিনা উইকেটে ৪৫ রান করা লঙ্কানদের রানের গতি থামায় টাইগাররা। ৭৭ রানে চার উইকেট তুলে নেয় টাইগাররা। যার তিনটিই অভিষিক্ত ইবাদতের শিকার।

বিপর্যয় সামলে নেন মেন্ডিস। লঙ্কানদের কক্ষপথে রেখে ফিরে আসেন তিনি। ৩৭ বলে ৬০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে থামেন এ ওপেনার । নিসাঙ্কা ফিরে গেছেন ১৯ বলে ২০ রান তুলে। মেন্ডিসের বিদায়ের পর অসমাপ্ত কাজটাই যেন করেছেন অধিনায়ক দাসুন সানাকা। ৩৩ বলে ৪৫ রান করেন সানাকা। শেষ দিকে চামিকা করুনারত্নে ১০ বলে ১৬ রানে আউট হন। আসিথা ফার্নান্দো তিন বলে ১০ রান করে শ্রীলঙ্কাকে নাটকীয় জয় উপহার দেন। এই জয়ে সুপার ফোরে উঠে গেল টুর্নামেন্টের আয়োজক লঙ্কানরা।

সফল রান তাড়ার পর শ্রীলঙ্কার উল্লাস

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাট চালায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক সাকিবের যে চাওয়া ছিল সেটাই পূরণ করেছেন সতীর্থরা। প্রত্যাশিত সংগ্রহটাই পেয়েছে টাইগাররা। যেখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন দলের তরুণ ব্যাটসম্যানরা। বাঁচা-মরার ম্যাচে মেহেদী হাসান মিরাজ, আফিফ হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ঝড় তুলেছেন। কার্যকর ব্যাটিং করেছেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং সাকিবও।

বাংলাদেশের ইনিংস শুরু হয় চমক দিয়ে। স্বীকৃত দুই ওপেনার নাঈম শেখ ও এনামুল হক বিজয়কে বাদ দিয়ে নামানো হয় নতুন এক জুটি। একাদশে ফিরেই ওপেনিং করতে আসেন মিরাজ ও সাব্বির রহমান। তৃতীয় ওভারেই তারা বিচ্ছিন্ন হন। কিন্তু শুরুর ধাক্কায় ভড়কে যায়নি দল। মিরাজের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে আশা দেখতে থাকে বাংলাদেশ। তার দারুণ ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে টাইগাররা তোলে ৫৫ রান।

এই উল্লাস ম্যাচ শেষে ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ

২৬ বলে দুটি করে চার-ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ৩৮ রান করেন মিরাজ। ২২ বলে ৩৯ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেছেন আফিফ। তবে ফেরার ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখতে পারেননি ওপেনার সাব্বির। ছয় বলে পাঁচ রানে ফিরে গেছেন তিনি। যথারীতি মুশফিকুর রহিম আজও ব্যর্থ হয়েছেন। পাঁচ বলে চার রানে আউট হন তিনি। তবে কিছুটা হলেও অভিজ্ঞতার মূল্য চুকিয়েছেন অধিনায়ক সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ।

আফিফকে দুজনই যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন। ২২ বলে ২৪ রানে সাকিব বিদায় নিলে মাহমুদউল্লাহ ভরসা হয়ে ওঠেন। ২২ বলে ২৭ রান তোলেন সাবেক এই অধিনায়ক। শেষ দিকে মোসোদ্দেক নয় বলে ২৪ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে নিয়ে যান শক্তিশালী অবস্থানে। লঙ্কানদের পক্ষে চামিকা করুনারত্নে ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা দুটি করে উইকেট নেন। একটি করে শিকার আসিথা ফার্নান্দো, মাহিশ থিকশানা ও মধুশঙ্ক।