স্পিন জাদুতে ‘ধবলধোলাই’ মিশন সম্পন্ন

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা বরাবরের মতোই স্পিনের বিপক্ষে দুর্বল। চিরায়তভাবে ঘরের মাঠে ক্যারিবিয়ানদের ঘূর্ণি জাদুতে বেঁধে ফেলার প্রয়াসই চালিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। স্পিন জালে সফলতাও এসেছে বেশ। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেও স্পিন দিয়ে স্বাগতিকদের কাঁদিয়ে ছাড়ল বাংলাদেশ দল।

তাইজুলের ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে পড়ে উইন্ডিজের ব্যাটাররা

গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামের ২২ গজকে তামিম ইকবালরা ‘হোম কন্ডিশন’ বলতেই পারেন। যেন মিরপুর স্টেডিয়ামের কপিই সুদূর ক্যারিবিয়ানে সাজানো আছে। স্লো, লো বাউন্সের উইকেট, সঙ্গে স্পিনারদের জন্য সুবিধা। এমন কন্ডিশনের পূর্ণ ফায়দা লুটে নিয়েছে টাইগাররা। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে উইন্ডিজদের ধবলধোলাইয়ের মিশন সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ দল।

গতকাল সিরিজের শেষ ম্যাচে স্বাগতিকদের ৪ উইকেটে পরাজিত করে তামিম বাহিনী। ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে তাইজুল ইসলাম হয়েছেন ম্যাচসেরা। ১১৭ রান করে তামিম সিরিজসেরা। ৩-০ তে ওয়ানডে সিরিজ জিতে আজই দেশের পথে বিমানে চড়বেন ক্রিকেটাররা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে এবার টেস্টের পর টি-২০ তেও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ দল। সফরে টানা চার ম্যাচে হারের পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারীরা। প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডেতে নামতেই দাপুটে বাংলাদেশের ছবিটা ধরা দিল। স্পিনারদের দাপটে তিনটি ম্যাচই জিতেছে টাইগাররা।

গতকাল গায়ানায় টসে হেরে আগে ব্যাট করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৮.৪ ওভারে ১৭৮ রানে অলআউট হয়। জবাবে ৪৮.৩ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৯ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ দল।

রান তাড়ার মিশনে গতকাল ইনিংসের শুরুতেই ফিরেন নাজমুল হোসেন শান্ত (১)। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ তথা লিস্ট-এ ক্রিকেটে রেকর্ড ১১৩৮ রান করা এনামুল হককে বসিয়ে খেলানো শান্ত ক্যাচ দিয়েছেন কিপারের হাতে। দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক তামিম ও লিটন ৫০ রানের জুটি গড়েন।

এ জুটি ভাঙে তামিম সুইপ করতে গিয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ দিলে। তিনি ৩৪ রান করেন। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরি করা লিটন ফিরেছেন ২৫তম ওভারে। গুদাকেশ মোতির দুর্দান্ত কট অ্যান্ড বোল্ডের শিকার হন তিনি। এক বল পরই বোল্ড হন আফিফ। দলীয় ৯৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ দল।

গুদাকেশ মোতির চতুর্থ শিকার হয়েছেন মোসাদ্দেক। একপ্রান্ত আগলে খেলার চেষ্টা করলেও মাহমুদউল্লাহ ইনিংস শেষ করতে পারেননি। দলীয় ১৪৭ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি আউট হন। মোসাদ্দেক ১৪, মাহমুদউল্লাহ ২৬ রান করেন।

পরে সপ্তম উইকেটে নুরুল হাসান সোহান ও মিরাজ দলের হাল ধরেন। ৩২ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। সোহান অপরাজিত ৩২, মিরাজ অপরাজিত ১৬ রান করেন। উইন্ডিজদের পক্ষে গুদাকেশ মোতি ৪টি, পুরান-আলজারি জোসেফ ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।

এর আগে ২৭ মাস পর ওয়ানডে খেলতে নেমে তাইজুলের ৫ উইকেট শিকারই ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়। স্বাগতিকদের ব্যাটিং লাইনে বারবার আঘাত হেনেছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। অভিষেকের ৮ বছর পর ওয়ানডেতে ৫ উইকেট পেলেন তিনি। অবশ্য এত বছরে ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ১০টি।

গতকাল ১০ ওভারে ২ মেডেনসহ ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। যার মধ্যে তিনটিই বোল্ড। ইনিংসের তৃতীয় ও নিজের প্রথম বলেই ব্রেন্ডন কিংকে বোল্ড করেছেন। পরে শাই হোপকে ফ্লাইটে পরাস্ত করেছেন, দুর্দান্ত স্ট্যাম্পিং করেছেন নুরুল হাসান সোহান। বোল্ড করেছেন রোভম্যান পাওয়েলকে। শাই হোপের আউটের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে স্ট্যাম্পিং হয়েছেন কিমু পল।

নিজের কোটার শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুইশ রানের সম্ভাবনা নষ্ট করে দেন তাইজুল। উইন্ডিজ অধিনায়ক নিকোলাস পুরান বোল্ড হন এই বাঁহাতির ঘূর্ণিতে। পুরান ৭৩, কার্টি ৩৩, রোভম্যান পাওয়েল ১৮, শেপার্ড ১৯ রান করেন। বাংলাদেশের নাসুম, মোস্তাফিজ ২টি করে, মোসাদ্দেক ১টি উইকেট পান।