শহীদুল নিষিদ্ধ: নেপথ্যে ভেষজ ঔষধ ও ভুল সিদ্ধান্ত

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টির ফাইনালে মাশরাফি-মাহমুদউল্লাহদের খুলনাকে রুদ্ধশ্বাস শেষ ওভারে ট্রফি জিতিয়েছিলেন শহীদুল ইসলাম। ঠিক তার কয়েকদিন আগে প্রাণপ্রিয় পিতাকে হারিয়েছিলেন তিনি।

শহীদুল

বরিশালে বাবাকে দাফন শেষে ঢাকায় ফিরে আইসোলেশনে ছিলেন। রুমবন্দী জীবন থেকেই সোজা ২২ গজে শহীদুল। বাবাকে হারানোর শোককে চাপা দিয়ে খুলনার শিরোপা জয়ের নায়ক হয়েছিলেন ডানহাতি এ পেসার। সর্বশেষ বিপিএলের ফাইনালেও শেষ ওভারে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জয়ের নায়ক শহীদুল। সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ‘ডেথ ওভার স্পেশালিস্ট’ হওয়ার কারণেই জাতীয় দলেও ডাক পেয়েছেন এ তরুণ।

একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলেছেন বাংলাদেশের জার্সিতে। ফিটনেস, ফর্ম মিলে লম্বা দৌড়ের ঘোড়া হওয়ার রসদই ছিল শহীদুলের মাঝে। পেস বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাটিংটাও ভালোই পারেন তিনি। বিএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা এই ক্রিকেটার শিক্ষা-দীক্ষায়ও সর্বোচ্চ শিখরে গিয়েছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বেশ পরিপাটি, ধার্মিক মানুষ শহীদুল। স্ত্রী এবং পরিবারসহ নারায়নগঞ্জের বাসিন্দা তিনি। ডোপ টেস্টে পজিটিভ হওয়ায় গতকাল আইসিসি ১০ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছে ২৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারকে।

এ খবরের সঙ্গে শহীদুলকে জড়িয়ে নানা কটু কথাও ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিন্তু এসবের বাইরে সবার মনেই প্রশ্ন জেগেছে, কেন শহীদুল এমন ঔষধ খেয়েছিলেন? কার পরামর্শে এটা করেছেন? এমন শিক্ষিত-নিয়ন্ত্রিত জীবনের অধিকারী ক্রিকেটার কিভাবে এমন ভুল করেন?

সাইড স্ট্রেইনের ইনজুরিতে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর মিস করা শহীদুল আইসিসির অ্যান্টি ডোপিং নীতিমালার ২.১ ধারা ভঙ্গ করেছেন। তার ডোপ টেস্ট হয়েছিল গত মার্চে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজ চলাকালীন। ইউরিনের স্যাম্পল দিলে সেখানেই ডোপ পজিটিভ হন তিনি। গত ২৮ মে থেকে শাস্তি শুরু হয়ে গেছে, আগামী বছর ২৮ মার্চ থেকে সব ধরনের ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন শহীদুল।

খোদ আইসিসিই জানিয়েছে, স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে ভেষজ ঔষধ সেবন করেছিলেন শহীদুল। তবে তা ইচ্ছাকৃত নয়, আইসিসির নিয়মকে অবহেলার কারণে নয়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া ওই ভেষজ ঔষুধে নিষিদ্ধ পদার্থ ছিল। পারফরম্যান্সে উন্নতি আনতে শক্তিবর্ধক কিছু খাননি তিনি।

নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে আইসিসির ডোপিং কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট করতে পেরেছেন শহীদুল। তাই ১০ মাসের শাস্তি পেয়েছেন, নয়তো ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারতেন তিনি।

আইসিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, শহীদুলের সেবন করা ঔষধে নিষিদ্ধ ক্লোমিফেনের উপাদান ছিল। মজার তথ্য হলো, তরুণ এই ক্রিকেটার জানতেন না, এই ঔষধ কাদের জন্য, কারা ব্যবহার করেন। জানা গেছে, ক্লোমিফেনে মূলত মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ডিম্বানু উৎপাদনের আশায় তারা এটি সেবন করেন।

শুধু ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ খাওয়াই নয়, শহীদুল আরও একটি ভুল করেছেন। যেটি সবচেয়ে মারাত্মক ভুল ছিল তার দিক থেকে।

বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, এই ঔষধ খাওয়ার বিষয়ে বিসিবির মেডিক্যাল বিভাগকে একবারও অবহিত করেননি শহীদুল।

বিসিবির এক চিকিৎসক এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে বলেছেন, ‘উনার বিষয়টা পুরোই অনিচ্ছাকৃত। ব্যক্তিগত কারণে চিকিৎসার জন্য কিছু ঔষুধ খাচ্ছিলেন, উনার ডাক্তারের পরামর্শে। ডাক্তারও বলেছিলেন সমস্যা হবে না। যদিও উনি স্পোর্টস ফিজিশিয়ান নন। তাই ক্রীড়াবিদদের জন্য সমস্যা হবে এই বিষয়টা ওই চিকিৎসক জানতেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘শহীদুল যে ভুলটা করেছে, সেটা হলো বিষয়টা তখন বিসিবির মেডিক্যাল বিভাগকে বলেনি। বলা উচিত ছিল। অবশ্য উনি আইসিসির টিমকে বিস্তারিত জানিয়েছেন, পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন। কী কী ঔষধ খাচ্ছিলেন সবকিছু প্রেসক্রিপশনসহ দেখিয়েছেন। পরে ডোপ টেস্টে নিষিদ্ধ পদার্থ পাওয়া গেছে। সহযোগিতা করায়, স্বীকারোক্তি দেওয়ায় আইসিসি নুন্যতম একটা শাস্তি শহীদুলকে দিয়েছে।’