৫০ দিনে ১৩টি ধর্ষণের ঘটনা!

সম্প্রতি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সেনবাগ ও চাটখিলে দুই গৃহবধূকে ধর্ষণ ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনা সামনে আসে। এ তিনটিসহ জেলায় গত ৫০ দিনে ১৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যা গড়ে প্রায় প্রতি ৪ দিনে একটি।

নোয়াখালীর মানচিত্র

অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের ২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত নোয়াখালীতে ১৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে রয়েছে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের ভিডিও ধারণ, শিশু ও প্রতিবন্ধী ধর্ষণ। এসব ঘটনায় প্রায় সব অভিযুক্তই গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ধর্ষণের ঘটনাগুলোর মধ্যে দেশব্যাপী সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে গত ২ সেপ্টেম্বর বেগমগঞ্জের একলাশপুরে ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে এক গৃহবধূকে (৩৫) বিবস্ত্র করে পাশবিক নির্যাতন ও সেই ভিডিও ধারণ করে সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া। স্থানীয় সন্ত্রাসী দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা এ ঘটনা ঘটায়, যাদের মধ্যে মামলার আসামিসহ বেশিরভা অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার হয়েছে।

এ উপজেলার চৌমুহনীতে গত ২৪ অক্টোবর ঘরের দরজা ভেঙে ১৬ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় বখাটে যুবক সুমনের (৩২) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মামলা হলে সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ৯ অক্টোবর জেলার সেনবাগের ছাতারপাইয়ার এলাকায় তিন মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই নারী নিজেই বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ ও আরো ৫-৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন, যাদের মধ্যে ৩ অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়েছে।

চাটখিলের নোয়াখলা ইউনিয়নের ২১ অক্টোবর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ শেষে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগে মামলা হয়। এতে অভিযুক্ত ইউনিয়ন যুবলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি মুজিবুল রহমান শরীফকে (৩২) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ উপজেলার সাহাপুরে ২১ অক্টোবর স্থানীয় মো. মিরাজ হোসেনের (১৮) বিরুদ্ধে এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুকে (১০) ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ২৪ অক্টোবর মামলা হওয়ায় আসামি পলাতক রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর কোম্পানীগঞ্জের চর এলাহীতে ১০ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ করে জয়নাল আবেদীন (২২)। কুমিল্লার দেবীদ্বারের এক মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে একই উপজেলার চর ফকিরায় এনে ৪ অক্টোবর রাতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

কোম্পানীগঞ্জের চর ফকিরায় সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসা করে দেয়ার কথা বলে এক নারীকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় ২২ অক্টোবর মামলা হলে ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

প্রেমের সম্পর্ক গড়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে সুবর্ণচরের মো. বাবুলের (২০) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত ১১ অক্টোবর মেয়েটির বাড়ি কবিরহাটে হওয়ায় ওই থানায় একটি মামলা হয়। একই উপজেলার চরজব্বারে ২১ অক্টোবর এক শিশুকে ধর্ষণ করে রক্তাক্ত করা হয়। এ ঘটনায় মামলা হলেও ধর্ষককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এ ছাড়া ২৩ অক্টোবর নোয়াখালীর হাতিয়া পৌরসভা এলাকায় ঘরে ঢুকে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় ওই নারী বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ জানালে অভিযুক্ত ট্রপেল দাস নয়নকে (২৮) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নোয়াখালীর নারী অধিকার ও মানবাধিকার নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, নারীর প্রতি এমন সহিংসতা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের বেশিরভাগ ঘটনার পেছনে রয়েছে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক আশ্রয়দাতা। ধর্ষক ও নির্যাতনকারীর সঙ্গে তাদের আশ্রয়দাতাদেরও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা জরুরি। তাছাড়া এমন ঘটনা বন্ধ হবে না বলে মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার অভিযোগ পেলেই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে আপোস করছে না পুলিশ।

নোয়াখালীর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতি রাতে জেলার ৯টি উপজেলায় বিশেষ অভিযান চলানো হচ্ছে। অপরাধীদের রাজনৈতিক পরিচয় নয়, অপরাধী হিসেবেই আইন অনুযায়ী শাস্তি নিশ্চিত করতে কাজ করছে পুলিশ।