প্রেম, দ্রোহ আর সাম্যের কবি নজরুলের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রেমের কবি, দ্রোহের কবি, সাম্যের কবি নজরুলের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৭৬ সালের আজকের এদিনে (২৭ আগস্ট) পরলোকে পাড়ি জমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) ৭৬ বছর বয়সে কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

কবির শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্রময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে নিয়ে গেছেন উচ্চতর আসনে।

পিতা কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুনের ঘর আলো করে বাংলা ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম নেন কাজী নজরুল ইসলাম। ছোট বেলায় বাবা-মা হারালে কবিকে ডাকা হত ‘দুখু মিয়া’ নামে।

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে কবির লেখাগুলো ছিল যেন এক একটি তাজা গ্রেনেড। তোষামদ কিংবা কারো মনোরঞ্জন করে প্রশংসা-পুরস্কার পাওয়ার মানসিকতা কবিকে কখনোই স্পর্শ করতে পারেনি। কবির লেখায় এ দেশের নিপীড়িত মানুষের কথা উঠে এসেছে। লোভ-লালসা, খ্যাতি, অর্থ, বিত্ত-বৈভবের কাছে তিনি কখনো মাথা নত করেননি। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য আজীবন সংগ্রামের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধেও তিনি সোচ্চার ছিলেন। নির্ভীক চিত্তে মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন। তাঁর রচিত ‘চল চল চল’ গানটি বাংলাদেশের রণসংগীত হিসেবে গাওয়া হয়। কবির লেখা কবিতা-গান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিকামী জনতাকে উৎসাহ জুগিয়েছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই ১৯৭২ সালের ২৪মে কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে এসে ‘জাতীয় কবি’র মর্যাদা প্রদান করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে ধানমন্ডিতে একটি বাড়ি প্রদান করেন। ১৯৭৪ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি কবিকে একুশে পদকে প্রদান করা হয়। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য একই বছরের ৯ই ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে।

কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো কবিকে নিয়ে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলা একাডেমি ও ছায়ানটের পক্ষ থেকে কবির স্মরণে দিনব্যাপী পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। কবির সমাধিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা, কবির আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া-মোনাজাতসহ কবির জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনাসহ বিস্তারিত কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

অন্যদিকে নজরুল ইনস্টিটিউট ‘নজরুল পদক-২০১৬’ প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

মহান কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজ পেপারের পক্ষ থেকে রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। যে কবি মানবতার মুক্তির কথা বলে তার মৃত্যু নাই। তিনি অজয়, অমর, অক্ষয়।