আপনি পড়ছেন

চলমান শিক্ষকদের আন্দোলনের জের ধরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাত সোয়া ৯টায় অনলাইনে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আবাসিক হলগুলোও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

cumilla university 1কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

এই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি বুধবারের (১ মে) মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এ সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকার করেছে এবং ক্যাম্পাসে অবস্থান করার ঘোষণা দিয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক জানান, সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষকদের দাবির ব্যাপারে একটি এবং গত রোববারের ঘটনা তদন্তে আরেকটি কমিটি গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈনের সাথে শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্যের লাঞ্ছিত হওয়া, শিক্ষকদের দুই পক্ষে হাতাহাতি, বিভিন্ন বিষয়ে থানায় অভিযোগের পাশাপাশি মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে শিক্ষকদের। মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে শিক্ষকরা উপাচার্য আবদুল মঈনের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ডাক দেন। এরপর রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাম্পাস বন্ধের ঘোষণা আসে।

cu vc 1কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি

সিন্ডিকেট সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, উপাচার্য আশঙ্কা করছেন, আবাসিক হলগুলোতে প্রচুর অস্ত্র ঢুকছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও টাকা দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে এখানে অন্য রকম কিছু ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এ আশঙ্কা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি হলগুলোও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এ সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকার করেছে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। উপাচার্যই বরং নিজেকে বাঁচানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করতে চাইছেন। ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই থাকবেন। কেউ ক্যাম্পাস থেকে যাবে না।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো আবু তাহের এ ব্যাপারে বলেন, হল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়ে উপাচার্য বহিরাগতদের হলে উঠাতে চান, ক্যাম্পাসে ঢোকাতে চান। আমরা সেটা হতে দেবো না। তিনি এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করতে পারেন না।

এদিকে কুবি প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মধ্যরাতে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে ফেলার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এর মাধ্যমে তাদের ভোগান্তি ও সেশনজট বাড়বে।

এমন পরিস্থিতিতে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে তারা বুধবার (১ মে) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্ত্বরে এ মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে।

শিক্ষার্থীরা এ সময় ক্যাম্পাস খুলে সকল কার্যক্রম চালু করা, অবিলম্বে ক্যাম্পাস বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ২৭ তারিখের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণ, প্রশাসনের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিলসহ বিভিন্ন দাবি জানান।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি অধ্যাপক আবদুল মঈন কুবির উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন। উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিভিন্ন অভিযোগে তার অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষকদের একটি অংশ। রোববার (২৮ এপ্রিল) প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতি হয়।